Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বানান-উচ্চারণে হোঁচট

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। অনেক ত্যাগস্বীকারের পর এই ভাষার মর্যাদা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। ভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। বাংলায় আমরা বলছি! লিখছি! শুনছি! তবে আমরা মনে ধারণ করতে পারছি না। আর এই ধারণা করতে না পারায় নানা ধরনের বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিদিনের জীবনে। কখনো বা ইচ্ছা করে, কখনো বা এর মাহাত্ম্য না বুঝতে পেরে, কখনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করতে পেরে, নানান ধরনের ভুল করছি। কারণ ভাষাকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করার ঘাটতি রয়েছে আমাদের মধ্যে।

প্রায় সবাই বানান বলার চেয়ে বেশি লিখতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেক কিছুই বলে দেওয়া হীনণ্মন্যতায় ভোগেন অনেকে। মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং লাঞ্ছিত হয়ে অস্বস্তিতে পড়েন আরও অনেকে! এ নিয়ে প্রায় সবার মধ্যে বিরক্তি আছে। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা আছে অনেকের মধ্যে। তবু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা বা আলোচনা একেবারেই নগণ্য।

শুদ্ধভাবে বলা বা লেখা এক ধরনের শিল্প। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে ধারণ করতে হবে মনে। উচ্চারণের জন্য সবার আগে জানতে হবে শব্দের সঠিক ব্যবহার শব্দের আওয়াজ শব্দ বলার ধরন শব্দ বলার কৌশল। এর জন্য মূলত দরকার বর্ণের সঠিক ব্যবহার। একই অ,আ,ই,ঈ, এ,ঐ,ক,খ-কে একেক মানুষ একেকভাবে বলছেন। শুরু থেকেই যদি বর্ণ উচ্চারণ থেকে শুরু করে লেখা পর্যন্ত সঠিকভাবে শেখানো যায়, তাহলে পদে পদে জীবনে হোঁচট খেতে হয় না। কোথায় কখন কোন বর্ণের কোন উচ্চারণ হবে, সেদিকে ছোট থেকেই জোর দেওয়া উচিত।

বাংলা বর্ণের উচ্চারণ কখন কোথায় কিভাবে ব্যবহার হবে? কখন কোথায় কী ধরনের বানান হবে, সেই ধরনের চিন্তা ভাবনাও হয়তো কখনো কারও মনে আসেনি। এর মূল কারণ যুক্তবর্ণ একটি বর্ণের সঙ্গে আরেকটি বর্ণকে সংযুক্ত করে বানানের সংক্ষিপ্ত করে। যা দেখতে সুন্দর, বলতে সুন্দর। এ ধরনের ছোট ছোট বিষয়গুলো যদি কেউ বুঝতে পারে, তবে সে বাংলার সঠিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে লিখতে পারা এবং বাংলাকে ধারণ করতে পারবে।

ভালো প্রক্রিয়াটা হলো, নিয়ম-কানুন শেখার পর অভিধানের প্রতিটি শব্দের ওপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে যাওয়া। কিভাবে, কত বার বুলাবেন, তা নির্ভর করছে আপনার মনে রাখার ক্ষমতার ওপর। সবার ক্ষমতা এক রকম নয়, তা তো আপনি জানেনই। আর শেষ পর্যন্ত অভিধান থেকে আপনার মুক্তি নেই। শুদ্ধ বানান লিখতে হলে অভিধান আপনাকে খুলতেই হবে। কারণ সময়-অসময় একেকটা শব্দ স্মৃতিতে ঝাপসা হয়ে যায়! সবার পক্ষে শুদ্ধ বানানে লেখা সম্ভব নয়। এ কারণেই পেশাদার প্রুফ রিডার দরকার হয়। বাংলায়ও ইংরেজিতেও। নিশ্চয় অন্য সব ভাষায়ও। এবং এ বাবদ প্রকাশককে বেশ ভালো পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। ইউরোপ-আমেরিকায় ইন্টেলেকচুয়াল পেশা হিসেবে এটি একটি দামি কাজ।

শিখতে গেলে ভুল হবেই। ভুল নিয়ে সাধারণ লোকের ইতস্তত করার কিছু নেই। হীনণ্মন্যতায় ভোগার কারণ নেই। লাঞ্ছিত না করা বা লাঞ্ছিত না হওয়ার দিকে বিশেষ নজর রাখা উচিত। বিরক্তি-রাগ-ক্ষোভ-হতাশার কোনো মানে নেই। শান্ত থাকুন। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন।

এটা কেন করা উচিত?
ভাষার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগাযোগ। তাকে যত শক্তিশালী করা যাবে, তত বেশি খাতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। লেখার সময় খেয়াল রাখতে হয়, এটা কত বেশি লোক বুঝতে পারবে। কত সহজে বুঝতে পারবে। যদি কেউ বুঝতে না পারে, তাহলে ওই ভাষার কোনো ক্ষমতা নেই। সঠিকভাবে সঠিক নিয়মের বর্ণ শব্দ শিখুন। ভাষাকে ধারণ করতে হবে। জোর করে শিখতে নয় কারণ ভাষা ও একটা শিল্প। সঠিক ও সুন্দরভাবে বলতে পারা লিখতে পারা প্রতিভা। তাই ধৈর্য নিয়ে, শান্তভাবে, ঠাণ্ডা মাথায় ভাষার চর্চা করুন। বাংলাকে মনেপ্রাণে ধারণ করুন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ