Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিক্স পোকাবাহিত নতুন ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা

জঙ্গলের একটি অংশে নতুন এক টিক্স ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা তাই টিক্স পোকা ধরতে বেরিয়ে পড়েছেন৷ জঙ্গলের পথের একশো মিটার বরাবর তাঁরা দুই ধারেই এই প্রাণীর খোঁজ করছেন৷

২০১৭ সালে চীনের আলংশানজেনে টিক্স পোকার শরীরে আলংশান ভাইরাস বা এএলএসভি আবিষ্কৃত হয়৷ সেই ভাইরাস মানুষের শরীরে রোগের লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷

২০২২ সালের হেমন্তকালে করনেল ফ্রেফেল ও তাঁর টিম প্রথমবার সুইজারল্যান্ডে টিক্স পোকার শরীরে সেই ভাইরাসের অস্তিত্বের প্রমাণ দেন৷ ফ্রেফেল বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, এফএসএমই ভাইরাস পাবো৷ সেটা পেয়েওছি৷ এএলএসভি বা আলংশান ভাইরাস কাকতালীয়ভাবে পাওয়া গেছে৷ ভাইরোলজিস্ট হিসেবে আমরা সুইজারল্যান্ডে সেটা শনাক্ত করে খুশি হয়েছি৷ ভাইরোলজিস্টদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই ভাইরাসের জৈবিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা নেই৷ আমরা ল্যাবে মলিকিউলার বায়োলজিকাল পদ্ধতিতে ভাইরাসটি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷”

আরাকনিডস গোত্রের এই সব সংগৃহিত পোকা ল্যাবে আনা হয়েছে৷ সেখানেই ভাইরোলজিস্টদের আসল কাজ শুরু হচ্ছে৷ করনেল ফ্রেফেল বলেন, ‘‘টিক্স পোকার খোলস বেশ শক্ত৷ আমাদের সেগুলি ভাঙতে হবে, পোকাগুলিকে পিষতে হবে, যাকে আমরা ‘হোমোজিনাইজ’ বলি৷ এভাবে টিক্সের শরীরের মধ্যে নিউক্লিক অ্যাসিড পর্যন্ত পৌঁছতে চাই৷”

করনেল ফ্রেফেল ল্যাবের ঘটনাপ্রবাহ নিখুঁতভাবে রেকর্ড করছেন৷ নিউক্লিক অ্যাসিডসহ পিষে ফেলা টিক্সের যাবতীয় উপাদানের জিনোটাইপ পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ছত্রাক, ব্যাকটিরিয়া ও এএসএলভি-র মতো ভাইরাসের জিনোটাইপও এভাবে টিক্সের শরীরে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷

এএলএসভি ভাইরাস কতটা আতঙ্কের

ভাইরাসের কাঠামো জানা গেলে মানুষের শরীরে এএলএসভি শনাক্ত করার পরীক্ষা সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ সুইজারল্যান্ডের ভাইরোলজিস্ট ও ডাক্তারদের জন্য সেটা গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ৷ কারণ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গত বছর গ্রীষ্মের সময় টিক্সের কামড় খাওয়া রোগীর সংখ্যা আচমকা বেড়ে গিয়েছিল৷ তাদের মধ্যে জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও অচেতন অবস্থার মতো লক্ষণ দেখা গিয়েছিল৷ কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে লক্ষণগুলি পরিচিত মনে হলেও ডাক্তাররা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছিলেন৷

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট টোবিয়াস ভাইস বলেন, ‘‘সবার আগে এফএসএমই, মেনিনগো-এনসেফালাইটিস বা লাইম রোগের মতো টিক্স-বাহিত রোগ পরীক্ষা করা হয়৷ রোগী আগেও টিক্সের কামড় খেয়ে থাকলে আরো গুরুত্ব দিয়ে সেগুলির সন্ধান করা হয়৷ সবার আগে সেটাই শনাক্ত করার চেষ্টা হয়৷ বিস্ময়করভাবে আমরা অনেক রোগীর শরীরে এই সব প্যাথোজেনের অস্তিত্বের প্রমাণ পাই না৷ এখন আমরা সন্ধান চালাচ্ছি৷”

রোগীরা কি তাহলে আলংশান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন? সেটা পরীক্ষা করতে নিউরলজিস্ট হিসেবে টোবিয়াস ভাইস সম্প্রতি ৪০ জন রোগীর রক্তের নমুনা করনেল ফ্রেফেলের ল্যাবে পাঠিয়েছিলেন৷ টোবিয়াস ভাইস বলেন, ‘‘আমরা উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছি৷ সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হলে মানুষের শরীরে এই প্রথম এই প্যাথোজেনের অস্তিত্ব প্রমাণিত হবে৷ টিক্সের ক্ষেত্রে এত ঘনঘন সেই প্রমাণ পাওয়ার পর রোগীদের শরীরেও সেই প্যাথোজেন আছে কিনা, তা জানতে আমরা উদগ্রিব হয়ে আছি৷ সেটা জানলে আমাদের সুবিধা হবে৷”

প্রায় ছয় মাস পর ফল পাওয়া গেল৷ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ স্যাম্পেলে এএলএসভি ভাইরাস পাওয়া গেছে৷ এবার শুধু প্রথম পরীক্ষার ফল যাচাই করতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে হবে৷ স্বাস্থ্যের জন্য এএলএসভি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সে বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না৷ করনেল ফ্রেফেলের মতে, সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই৷

প্রয়োজন দেখা দিলে টিকা তৈরি করা তেমন কঠিন কাজ হবে না বলে তিনি আশ্বাস দিচ্ছেন৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ