শব্দ খরচে অরুচি, ইমোজি নির্ভর আবেগ
আজকাল জীবন বেশ অনেকটাই যান্ত্রিক। এইযে পুরো বিশ্ব করোনার কবলে পরে নাজেহাল হয়ে গেলো, তখন মানুষের সহায় হয়ে দাঁড়ালো এই যন্ত্রই। জীবন হয়ে গেলো অনলাইন নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও মানুষকে দিচ্ছে একের পর এক নতুন ধারা। এই যেমন এককালে ফেসবুকে একটি লাইক পাওয়ার আশায় মানুষ হন্যে হয়ে পরে থাকতো। কিন্তু এখন ছবিতে লাইক দেয়া যেন অন্যায়ের কাজ। ইমোজিগুলোই যেন মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম।
মনের ভাব প্রকাশ করতে এখন আর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ট খরচ করতে হয় না। গুটিকয়েক ইমোজি দিয়েই প্রকাশ করা যায় মনের ভাষা। একটি ইমোজি বলতে পারে ওপারের মানুষটি ভালোবাসি বলতে চাচ্ছে নাকি ঘৃণা করি বলতে চাচ্ছে। আবার বিরক্তিও প্রকাশ করা যায় এই একটি মাত্র ইমোজি দিয়ে।
দিনের পর দিন মানুষের ইমোজির প্রতি নির্ভরশীলতা যেন বেড়েই চলেছে। এর কারণও অনেকটা সহজ। আজকাল সব কিছুই চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তি জীবনে যতটা সহজ করেছে ঠিক ততোটাই শর্টকাট করেছে। ঢাকার রাস্তায় বাসের পরিবর্তে মেট্রো ব্যবহারে যেমন সময় বাঁচবে ঠিক তেমনই শব্দের পরিবর্তে ইমোজি ব্যবহারেও অনেকটা সময় বাঁচবে। আবার ব্যস্ততার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির টেক্সটের রিপ্লাই না দিলেও কিন্তু সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই ব্যস্ত থাকলে এক ফাঁকে একটি ইমোজি পাঠিয়ে রাখলে, সাপও মরলো আর লাঠিও ভাঙলো না।
টাইপ করা মেসেজে যেহেতু কণ্ঠ শোনা যায় না তাই অনেক সময় সেই মেসেজ যে দিচ্ছে আর যে পড়ছে তাদের মাঝে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু একটা ইমোজি এই সমস্যাটাকে নিমিষেই সমাধান করে ফেলে। ইমোজি কিন্তু আবার বিচক্ষণতার পরীক্ষাও নিচ্ছে। এতোধরনের ইমোজির কোনটার কি মানে তা বুঝাতেও অনেকে হিমশিম খান। ভুল ইমোজি ব্যবহারে হিতের বিপরীতও হতে পারে।
তবে শব্দ খরচ করে যে আবেগ প্রকাশ করা যায় তা কি আদৌ ইমোজ দিয়ে সম্ভব। শব্দ খরচে তরুণ প্রজন্মের এইঅরুচি তাদের সুন্দর আবেগ প্রকাশের মাধ্যমকে সরিয়ে দিচ্ছে। ইমোজি তো আমরা হরহামেশাই ব্যবহার করতে থাকি কিন্তু সব জায়গায় সব সময় ইমোজি ব্যবহার করাটা আসলে ঠিক কতটা যুক্তিসঙ্গত?
ইমোজি ব্যবহার করাটাও কিন্তু এক রকম শিষ্টাচারের মধ্যেই পড়ে। বন্ধুদের সাথে টেক্সটে, যেমন তুমি হয়তো ইমোজির বনয় বইয়ে দাও কিন্তু তোমার শিক্ষককে একটা টেক্সট পাঠালে সেখানে কিন্তু এমন করাটা একদমই ঠিক না। কোন কিছুর অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ইমেইল করতে চাইলে বা অফিশিয়াল যেকোনো মেইলে ইমোজি ব্যবহার না করাটাই ভালো। আবার ক্যাজুয়াল কনভারসেশন, আলোচনামূলক বার্তায় কিংবা বিজনেস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ইমোজির ব্যবহারটা পরিমিতভাবে করা উচিত।