সাদিয়ার লড়াকু জীবন: অনুপ্রাণিত করুক নারীকে
জীবন নাটকের চেয়ে বেশি নাটকীয়। এর প্রতি বাঁক লড়াই আর সংগ্রামের গল্পে ঠাসা। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যিনি বিনা লড়াইয়ে জীবনে জয়ী হয়েছেন। তবে সে লড়াই ও সংগ্রামের গল্প একেক জনের একেক রকম। কারো বেশি কারোবা কম। তবে যারা জীবন পথে চলতে গিয়ে হোছট খেয়েও মুখ থুবড়ে না পড়ে দিনশেষে জয়ের গল্প তারাই লিখতে সক্ষম হন। সাদিয়া এক লড়াকু তরুণীর নাম। জীবনের গল্প তিনি লিখতে শুরু করেছেন কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে। আর তার সেই কঠিন জয়ের গল্প হোক আপামর নারী সমাজের প্রেরণার গল্প।
গণমাধ্যম দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, দোকানে দোকানে জর্দা বিক্রি করতেন সাদিয়ার বাবা। আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন তার মা। দুজনের যা আয়, তাতে সংসার টেনেটুনে চললেও লেখাপড়ার খরচ মিটত না সাদিয়ার। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাই টিউশনি শুরু করে সাদিয়া। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অন্যকে পড়িয়ে নিজে পড়েছেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে উঠে পড়লেন বিপদে। পড়ালেখার খরচ এত বেশি যে কিছুতেই পেরে উঠছিলেন না। সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
সাদিয়ার লড়াকু জীবনের গল্প এখানেই শেষ নয়। বলছিলেন, ‘এমনও দিন গেছে, সারা দিন না খেয়ে থেকেছি। কখনো নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি। ঈদের সময় নতুন জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য মায়ের ছিল না। মূল বইয়ের পাশাপাশি সহায়ক যে বইয়ের প্রয়োজন হয়, সেগুলো বড় ভাই-আপুদের থেকে ধার নিয়ে পড়েছি।’
সাদিয়া মনি এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। লালমনিরহাটের সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এই ফল অর্জন করেন তিনি।
সাফল্যের দিনে মায়ের আত্মত্যাগের কথাই বেশি করে মনে পড়ছে সাদিয়ার, ‘অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন মা। নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন। মাকে কখনো নতুন কাপড় পরতে দেখিনি। এগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিত। লুকিয়ে কাঁদতাম আর প্রতিজ্ঞা করতাম, একদিন সফল হয়ে মায়ের সব কষ্ট দূর করব, তাঁর মুখে হাসি ফোটাব।’ সেই লক্ষ্যেই একটু একটু করে এগোচ্ছেন সাদিয়া মনি। ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে মানুষের সেবা করতে চান তিনি।
সাদিয়ার মতো তরুণীরা এদেশের প্রেরণার গল্প। যারা একটুতেই ভেঙে পড়েন তাদের কাছে সাদিয়া হোক অন্যতম মনের জোর। গড়তে হলে ভাঙতে হয় আগে। পৃথিবীর নিয়ই এই। সভ্যতা না ভাঙলে নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠে না। প্রথা না ভাঙলে নতুন নিয়ম-নীতি প্রকাশিত হয় না। সেই ভাঙাকে যারা ভয় পান, জীবন পথের ধ্বংসস্তূপ ভেবে মুখ থুবড়ে পড়েন তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। আজকাল নিত্যই দেখা মিলছে ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহননের ঘটনা। কিন্তু সাদিয়ার মতো তরুণী যদি মনের প্রবল জোয়ার দিয়ে বাধার দেওয়াল ডিঙাতে পারে তবে অন্যরা কেনো নয়!
life is not a bed of roses অর্থাৎ জীবন পুষ্পশয্যা নয়। জীবন মূলত কণ্টকশয্যাই বটে। এর প্রতিটি পাতা অপঠিত, অজানা। সেই অজানাকে সুন্দর করে সাজাতে মনোবলই অন্যতম সঙ্গী। সেইসঙ্গে আবেগে গা না ভাসিয়ে জীবনের পথটাকে বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। সাদিয়া এ যুগের ভঙ্গুর মনের কিশোরী-তরুণী-নারীর অনুপ্রেরণার অংশ হয়ে উঠুক।চলার পথটা নতুন করে সাজাক নারী।