Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রাজিলে শিশুদের ক্যান্সারে সয়া চাষের যে সম্পর্ক

ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশ৷ কিন্তু সেখানে সয়াচাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর যোগ খতিয়ে দেখেছে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা৷

লিউকিমিয়া এক ধরনের রক্তের ক্যান্সার৷ ব্রাজিলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর সাথে সয়া চাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

পিএনএএস পত্রিকায় ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত হয় এবিষয়ে একটি গবেষণাপত্র৷

গবাদি পশুর ওপর নির্ভরশীল, এমন ফসলের বদলে সয়াচাষের দিকে গত কয়েক বছরে বেশি ঝুঁকেছেন ব্রাজিলের কৃষকরা৷ ফসল ভালো হবার জন্য ব্যবহার করা হয় একটি বিশেষ রাসায়নিক, গ্লাইফোসেট৷ এই গ্লাইফোসেট পানিতে মিশে নদীতে পৌঁছায়৷ পরে, বিভিন্ন এলাকার পানীয় জলের সাথে মিশে শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷

গবেষণার শুরুতে বিজ্ঞানীরা দেখেন, অর্ধেক জনসংখ্যার মানুষের হাতের কাছে পানীয় জলের জন্য একটি নির্দিষ্ট কুপ রয়েছে৷ বাকি অর্ধেক মানুষ মাটির নিচ থেকে তোলা পানির ওপরেই নির্ভরশীল, যা সহজেই দূষিত হতে পারে৷

এই দূষণ সবার জন্যে ক্ষতিকর হলেও গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামে কৃষক পরিবারের দশ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা৷ এর জন্য ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য খতিয়ে দেখে তারা৷ এই একই সময়ে ব্রাজিলের আমাজন ও সেরাদো-সংলগ্ন এলাকায় সয়া চাষ গতি লাভ করে৷

গবেষণার খাতিরে বিজ্ঞানীরা নজর দেন অসুস্থ শিশুটির বাসস্থান থেকে নদীর দূরত্ব ও শিশু ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব, এমন হাসপাতাল থেকে শিশুটির দূরত্বের দিকে৷ দেখা যায়, সেই দশ বছরে মোট ১২৩টি শিশু সয়া চাষজনিত অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়ার কারণে মারা গেছে৷

‘‘প্রায় অর্ধেকেরও বেশি লিউকিমিয়াজনিত মৃত্যুর সাথে কীটনাশকের সংস্পর্শের বিষয়টি” জড়িত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের মত৷ কিন্তু এই বিশেষ ধরনের লিউকিমিয়া সঠিক চিকিৎসা পেলে সেরে যায়৷

গবেষণাটি জানায় যে, সয়া চাষ বাড়ার পর এই ধরনের লিউকিমিয়াতে মারা যাওয়া শিশুরা সকলেই নিকটবর্তী হাসপাতাল থেকে একশ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে বাস করত৷

সয়া চাষের জনপ্রিয়তা

বিশ্ব বাজারের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ব্রাজিল সয়া চাষে শীর্ষস্থানে৷ মার্কিন গবেষক মারিন স্কিডমোর, যিনি এই গবেষণাটির প্রধান গবেষক, বলেন, ‘‘সয়া চাষের পরিধি খুব দ্রুত বড় হয়েছে৷” ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সেরাদো অঞ্চলে এই চাষ তিনগুণ হয়েছে৷ অন্যদিকে, আমাজন সংলগ্ন এলাকায় সয়া ফসলের পরিমাণ বেড়েছে বিশ গুণ!

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার জানায়, সয়াজনিত পণ্যের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের খাদ্য বাজারে ব্যবহৃত হয়৷ এর ৮০ শতাংশ যায় পশুপাখিদের খাবার তৈরিতে, বিশেষত সেইসব খামারে যেখানে গরু, মুরগি, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি হয়৷

যা বলে না এই গবেষণা

এই গবেষণাপত্রটির প্রধান খামতি এটাই যে এই গবেষণায় সরাসরিভাবে সয়া চাষের সাথে লিউকিমিয়াতে আক্রান্ত হবার কোনো যোগ প্রমাণিত হয়নি৷ শুধু একটি সম্পর্কের কথা উত্থাপিত করা হয়েছে সেখানে৷

ডর্টমুন্ড টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিকস শিক্ষক ও গবেষণা বলেন, এই গবেষণাটির সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলি নিয়ে যথেষ্ট ভাবেননি৷

তার মতে, ‘‘সম্পর্কটি যুক্তিসম্মত ও হয়তো সঠিকও, কিন্তু এই ফলাফলের আরো অন্যান্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে৷ গবেষকেরা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু আর্থসামাজিক ভ্যারিয়েবলের দিকটি দেখা হয়নি৷’’

জার্মানির লাইপজিশের আরেক বিজ্ঞানী মাটিয়াস হিজের মতে, কিছু খামতি তাকলেও এই গবেষণা পত্রটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে৷ গবেষণাটি বলছে, নদীর বিপরীত স্রোতের আশেপাশে থাকা শিশুদের তুলনায় নদীর স্রোতবরারবর যে অঞ্চল, সেখানকার শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার হার বেশি দেখা গেছে৷ ফলে, ক্যান্সারের সূত্র দূষিত পানীয় জলও হতে পারে৷

তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের দূষণের পেছনে কীটনাশক ছাড়া আর কোনো কারণের কথা ভাবতেও পারা যায় না৷’’

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ