Skip to content

২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনিকার হাতধরেই শিক্ষার আলোয় পথশিশুরা

কমপক্ষে হাজারখানেক পথশিশুর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে গেছে আনিকার হাত ধরে। এই আলোকে তার পরিকল্পনায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করার প্রযোজনীয়তা অনুভব করেন, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা নিজেদের নিরাপদ মনে করবে, তাদের শারীরিক, মানসিক মেধা বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবরূপ দিতে প্রতিষ্ঠা করে ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি, যেখানে রয়েছে তার মত কিছু সম্ভবনাাময়ী উদ্যোমী তরুণ-তরুণী।

সবার যৌথ উদ্যোগে ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি এবং ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিদ্যাসভা নামক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিদ্যাসভার একটি কাজের উদাহরণ এমন: ফাতিমা আক্তার; পথশিশু ফুলবিক্রেতা। তার বাবা একজন রিকশাচালক। ফুলবিক্রেতা ফাতিমা রাস্তায় ফুল বিক্রি করতো, কিন্তু সে পুষ্টিহীনতায় ভুগতো ও নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল। ফলে পড়াশোনার প্রতি তার অনীহা ছিল। একনি ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে বিদ্যাসভার একজন ভলান্টিয়ারের দেখা হয়ে যায়। বিদ্যাসভার হাত ধরে সে এখন যোগ বিয়োগ অঙ্ক করে, বিদ্যাসভার প্রতিটি অনুষ্ঠানে সে সামনে বসে জাতীয় সংগীত গায় ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নেয়। তার সামনে এখন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এরকম আরও হাজারো ফাতিমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বিদ্যাসভার কর্মীরা। যা বর্তমানে পরিচালনা করছে ‘ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি’।

খুব একটা সহজ ছিল না এই পথ চলা। যেকোনো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ততটাই কঠিন যতোটা কল্পনা করা সহজ। ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি প্রতিষ্ঠানটির সূচনালগ্নে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বাবা-মাকে বুঝিয়ে বাচ্চাদের উৎসাহিত করে বিদ্যাসভায় ভর্তি করানো। স্কুলের পরিচালনার খরচ, বই খাতা, জামাকাপড়, খাবার ইত্যাদির যোগানের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল, অনুদানের জন্য সবার নিকট হাত পাততে হয়েছিল। শুরুতে কেও এগিয়ে অসেনি, তখন তার নিজের জমানো টাকা থেকে খরচ বহন করতে হয়েছিল। সেসময় সে ছিল ছাত্রী এবং পেশায় মূলত একজন মডেল-অভিনেত্রী ও সমাজসেবক। মডেলিং ও অভিনয় থেকে প্রাপ্ত অর্থের সবটুকুই সে প্রতিষ্ঠানের পিছনে ব্যয় করতেন। তার উপার্জন করা সম্পূর্ণ অর্থই সে সমাজ সেবায় দিয়েছে। এখন পর্যন্ত নিরলসভবে কাজ করে যাচ্ছেন আনিকা তাবাসসুম।

ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি এর যাত্রা শুরু আনিকা তাবাসসুম এর হাত ধরে। এই তরুণীর জীবন অন্য কোন সাধারণ তরুণীর মতন নয়। মডেল ও অভিনয়ের পাশাপাশি সে দীর্ঘ দিন যাবত সমাজের অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একযুগ ধরে নিজ প্রচেষ্টায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ২রা ফেব্রুয়ারি আনিকা ও তার সহপাঠীরা শীতবস্ত্র দান করার জন্য রাস্তায় কাজ করছিলেন, তখন কিছু পথশিশু এসে বলেছিল, ‘আমরা কাপড় চাই না, আমরা পড়াশোনা করতে চাই।’ তখন আনিকা সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে অসহায় বাচ্চারে জন্য কাজ করবে। সমাজে অবহেলিত শিশুরা যারা পড়াশোনার সুযোগ পায় না, ছিন্নমূল মূলত যারা অপুষ্টিহীনতায় ভোগে, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগে, পড়াশোনায় অনীহা এবং শিক্ষার আলো থেকে বিরত পথশিশুরা, মানসিক বিকাশ ঠিকভাবে হয় না তাদের জন্য কাউন্সিলিং করা, তাদের সাংস্কৃতিক বিকাশ করা, মানবিক জ্ঞান ও ভোকেশনাল ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাদেরকে বিকশিত করা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে মূলত চাইল্ড গ্রুমিংকে মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন আনিকা।

আনিকার নিজ পড়াশোনার পাশাপাশি পথশিুরে রাস্তায়, পার্কে, রেললাইনের পাশে ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক শিক্ষাদান কর্মসূচি শুরু করেন। তার এই যাত্রাটি অনেক কঠিন ছিল, তবে তার নিষ্ঠা, ইচ্ছাশক্তি ও সততা তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান করতে সহায়তা করেছে। এমনকি করোনা মহামারীর সময় যখন গোটা পৃথিবী থমকে গিয়েছিল, তখনো থেমে থাকেনি আনিকার ছুটে চলা। সেই সময়ও তিনি ছুটে গিয়েছিলেন অসহায় শিশুদের কাছাকাছি।

ওয়ার্ক ফর বেটার সোসাইটি পরিচালিত বিদ্যাসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আনিকা তাবাসসুম দেশের একজন গুণী ও মেধাবী অভিনেত্রী। তিনি চান, নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করে প্রতিটি শিশুকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে। তার মূল উদ্দেশ্য দেশ ও জাতির গ্রামীণ এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া। শূন্য থেকে শুরু করে আজ বিদ্যাসভার যে অবস্থান তার পুরোটাই আনিকা ও তার সহযোদ্ধাদের অবদান।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ