Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হত্যা-আত্মহত্যার আবর্তেই ঘুরবে নারী?

দিন দিন নারীর নিরাপত্তা এ সমাজে অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠেছে। নারীরা পূর্বে বাইরে যতোটা ক্ষতির সম্মুখীন হতো ঘরে ততোটা নয়। কিন্তু এখন যুগ পাল্টেছে। সেইসঙ্গে বদল ঘটেছে নারীর ওপর নির্যাতনের! ঘরে-বাইরে নারী সর্বত্র অনিরাপদ। কোথাও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। একধরনের অরাজকতা ছেঁয়ে পড়েছে গোটা সমাজে, দেশে। মানুষের মানবিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় নারীকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে!

এমন কোনো দিন নেই যেদিন খবরেরকাগজের পাতায় নারী হত্যা-আত্মহত্যা-গুম-ধর্ষণ-যৌন হয়রানির ঘটনা শোনা না যাচ্ছে। প্রতিটি দিনই নারীর জন্য অনিরাপদ। ঘর থেকে বের হয়েই নারী অনিরাপদ নয় ঘরের ভেতরেও নারীকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। নারীকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছে পরিবার-পরিজন-প্রতিবেশী-দুর্বৃত্তরা। নারী সবার কাছেই তাদের হিসেব চুকানোর মাসুল। কেউবা লালাসাবৃত্তিতে নারীকে শিকারে পরিণত করছে আবার কেউবা তার ঝগড়া-ক্রোন্দল মেটাতে নারীর ওপর চড়াও হচ্ছে! শুধু তাই নয় দুর্বৃত্তের হামলার শিকারও এই দুর্বলভূজা নারী! এই দুর্বলতা শারীরিক নয় মানসিক। অধিকাংশ নারী মনের দিক থেকে নমনীয়। ফলে নারীকে দাবার গুটি করে যত মনোবাসনা সবটা পূরণ করার তাগিদ দেখা দেয়।

গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, বগুড়ায় পূজামণ্ডপের দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরে আশা রানী মোহন্ত (২৮) নামে এক নারী আনসার সদস্য খুন হয়েছেন। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার বানাইল এলাকায় এঘটনা ঘটেছে। নিহত নারী, ওই এলাকার ভজন কুমার মোহন্তের স্ত্রী।

জানা গেছে, সোমবার আশা বানাইল উত্তরপাড়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। দায়িত্ব শেষে রাত ১১টায় পূজামণ্ডপ থেকে তিনি বাড়িতে যান। তখন তার শশুড়ি এবং স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। এরপর রাত ১২টার দিকে আশার শাশুড়ি বাড়িতে ফিরে সোফার ওপরে আশাকে পড়ে থাকতে দেখেন। এ অবস্থায় তাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আশা রাণীই নয় এমন আরও নারীই প্রতিদিন খুন হচ্ছে। আত্মহত্যা করছে, ধর্ষণ, গুমের শিকার হচ্ছে!

সম্প্রতি সময়টা এমনভাবে এগিয়ে চলেছে যখন এক অদৃশ্য কালো ছাঁয়া নারীর চতুর্পাশে ঘুরছে, যখনই সুযোগ মিলছে ঠিক তখনই নারীর চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটাচ্ছে নতুবা প্রাণনাশ করছে! নারীর প্রতি এই বিদ্বেষ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আবহমানকালের। তবে যান্ত্রিকতার যুগে এসে নারীকে শুধু পণ্য ও ভোগ্যবস্তুতে রূপান্তরিত করাই নয় নারীকে নতুন পন্থায় অবরুদ্ধ করতে নারীর স্বাধীন জীবন, চলাফেরা, চেতনাকে গ্রাস করা হচ্ছে। নারীকে গুম, খুন করা হচ্ছে। যেন হত্যা-আত্মহত্যাই ঘুরপাক খাওয়াই নারীর জীবন!

আশা রানীর অকালে চলে যাওয়ার দায় কার? এ সমাজে-রাষ্ট্রের! যারা আশা রাণীকে নিরাপত্তা দিতে অক্ষম! ঘরে-বাইরে আশা রাণীরা আর কতটা নিরাপত্তাহীন হবে? নারীদের কি বেঁচে থাকার সামান্য অধিকারটুকুও এ সমাজ কেড়ে নেবে! আশা রাণী, মুক্তি রাণী বর্মন, রাবেয়া আক্তার এদের জন্য কি সমাজের কোনো দায় নেই? নাকি নারী হয়ে পৃথিবীতে জন্মনোই পাপ! কী উত্তর এর। এ সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত কেনো এত অনিশ্চিত জীবন পার করবে! গতকাল যে সুস্থ-স্বাভাবিক আজ তাকে মৃত্যের খাতায় নাম তুলতে হলো। তাও স্বাভাবিক মৃত্যু নয় এমন রহস্যজনক মৃত্যু!

নারীর প্রতি সহিংসতা, বর্বরতা, নিপীড়ন-নির্যাতন দমন করতে না পারলে এ সমাজের অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়বে। যে সমাজ নারীকে প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে অপারগ তারা অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জনে ব্যর্থ৷ ইতিহাস তাই স্বাক্ষী দেয়। তবু মানুষের অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতা ক্রমাগত বাড়ছে। হত্যা-আত্মহত্যার আবর্তে নারী আর কত পাক খাবে! এবার একটু নারী শ্বাস গ্রহণ করুক। বাঁচার মতো বাঁচতে শিখুক তবে তার জন্য এ রাষ্ট্রে নারীর সার্বিক উন্নয়নের চেয়ে তার প্রাণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে আগে। বাঁচার পরই তো মানুষ স্বাবলম্বী হয়, সম্মানিত হতে চায়। কিন্তু যদি নারীরা এভাবে পীড়নের শিকার হয়, খুন হয় তবে তো তার জীবনই থমকে গেলো! সেখানে উন্নয়নও প্রশ্নবিদ্ধ! তাই আগে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ