Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানী ও নারীর লড়াই 

সময় বদলেছে। আমরা এগিয়েছি। এগিয়েছি বলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। নারীরও কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে তাদের সেই সুযোগ বেশি বেড়েছে। অপরদিকে নারীর কমেছে নিরাপত্তা। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়া মানেই নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ না। যাতায়াতের নানা পথ তৈরি হওয়া মানে সামাজিক অস্থিতিশীলতা দূর হওয়া না। নগরজীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অপরাধের তীব্রতা। অপরাধের সাংস্কৃতিক প্রভাবক রয়েছে একই সঙ্গে রয়েছে আর্থ-সামাজিক নানা কারণ। কিন্তু নগরজীবনে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপরাধ এও মানতে হবে। অপরাধের তীব্রতা জনসমাজে কোন গোষ্ঠীর ওপর বেশি তা-ও বোঝা সহজ। নারীর লিঙ্গবৈষম্য নতুন কিছু নয়। তবে এই বৈষম্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারীর নিরাপত্তার অভাব। এই নিরাপত্তার অভাব নগরজীবনে হেজেমনির মতো, এই নিরাপত্তার অভাব নারীর জীবনে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকও বটে। 

নগরজীবন তীব্র ব্যস্ততার। ঘুম থেকে জাগার পর থেকে শুরু করে আবার ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্লান্তি। ক্লান্তির ঘনঘটার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নারীকে করে বিচলিত। নগরে নারীকে বাধ্য হয়েই সংসারের বাইরেও খুঁজে নিতে হয় কর্মসংস্থান। সামাজিকতার সঙ্গে মানিয়ে চলা যায় না। শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে নারীকে এখন ভাবতে হয় কিভাবে সে আয় করবে। কিন্তু কর্মসংস্থানে যাওয়ার পথটিও সমস্যার। বাড়ির কাছে হলে সমস্যা নেই। বাড়ি থেকে দূরে হলে তাকে পড়তে হয় বিপর্যয়ের মুখে। যদি কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায় তাহলে রাস্তায় নিরাপদে ফেরার ভয় আছে। রাতে এখন চলাচল অনেক কঠিন। দূরপাল্লার বাসে ভ্রমণের বিষয়টি তো অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। দূরপাল্লায় নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। এমন একাধিক ঘটনার পর পারিবারিকভাবেই অনেক নারীর গতিবিধি সীমাবদ্ধ হয়ে উঠেছে। নগরীতে শুধু বাসে চলাচলের ফলে তাকে যৌন নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হতে হয় এমন না। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রমেই জটিল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় তাকে ভাবতে হয় রাতে কেমন হবে। শহরে সড়কের উন্নতি হয়েছে। এর বিপরীতে গণপরিবহনব্যবস্থা রয়ে গেছে আগের মতোই। অফিস আওয়ার শেষে গণপরিবহনে মানুষের ভীড়ে ওঠাই কষ্টদায়ক। শহরের অনেক স্থানেই বাসস্ট্যান্ডের অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে সড়কে পারাপারের উপযুক্ত স্থানের। অনেক পুরুষ যেভাবে অবলীলায় ডিভাইডার টপকে পার হয়ে যান নারী তা পারে না। তাকে পড়তে হয় বিপদে। সড়কে বিশাল একটি সময় তার পার হয়ে যায় এভাবেই। বাসে ওঠার পরও তাকে কেমন হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয় তা অনেকেরই জানা। 

দুর্যোগের সময়েও নারীর জন্য বিপদ। সড়কে বৃষ্টিপাতে পানি জমলে চিরচেনা পথে চলাচল তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। এই যন্ত্রণার মধ্যেই তাকে যাতায়াত করতে হয়। বিশেষত এই সময়ে নারীর জন্য উপযুক্ত যানের অভাব থাকায় তাকে রিক্সা বা সিএনজিতে চড়তে হয়। রিক্সায় চড়ে বরং পানিকে গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। সবার ক্ষেত্রেই অবশ্য এমনটি প্রযোজ্য, কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বিষয়টি ভাবতে হবে। অনেক নারীকে বাধ্য হয়ে বাড়িতে আয়া রাখতে হয়। নিজ সন্তানের খেয়াল নারী সবসময় রাখতে পারে না। এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেখানে নারীকে তার সন্তানের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অনেক সময় কর্মস্থলই ত্যাগ করতে হয়। পরিবারে সমন্বয়ের কাজটি এখনও নগরে নারীকে করতে হয়। হোক না নারী যোগ্য। সংসারে তাকে সমন্বয়কের ভূমিকা নিতে হয়। তার ছুটি অফিস থেকে ফিরে হয় না। 

নগরজীবনে নারীকে অফিসে মুখোমুখি হতে হয় আরেক ধরনের সহিংসতার। অফিসে সহকর্মীদের দ্বারাও অনেক সময় লাঞ্ছিত হয় আবার অনেক সময় বসের দ্বারা। এ বিষয়ে নারীর অভিযোগের সুযোগ নেই। শিক্ষিত নারী বাদে দেশের অনেক স্বনির্ভরশীল নারী গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত। নারীর পক্ষে তখন মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে যায়। বিশেষত তারা আবাসন এমন এক স্থানে হয়ে থাকে যে স্থানটি তারজন্য নিরাপদ নয়। সম্প্রতি জানা গেছে, দেশে শিশু ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে। বাদ যায়নি প্রতিবন্ধী শিশুরাও। এই সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র কি করে মেনে নেয়া যায়? মেনে নেয়ার সুযোগ অনেক কম। কিন্তু নারীকে মেনে নিতেই হয়। এই যন্ত্রণা থেকে তার মুক্তির জন্য দায়িত্বশীলদের গাফিলতিকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। নারী অনেক সময় পথে নিজের হয়ে লড়াই করেন। তখন আশপাশের অনেকে নারীকেই দোষ দেয়। ওই মহিলা খারাপ এমন মন্তব্য কম শোনা যায় না। সড়কে আশি শতাংশই নারী। জীবনের  প্রয়োজনে, সংসারের প্রয়োজনে তাদের বাইরে থাকতে হয়। আর এই থাকার মধ্যেই নারীকে অসহায় অবস্থায় নিপীড়নের শিকার হতে হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশে কঠোর আইন রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন কি করা হয়েছে? আদপে হয় নি। এ নিয়ে বহুদিন আলোচনা হয়েছে। সমাধান পাওয়া যায় নি। আজ থেকে ১০ বছর আগেও সংবাদমাধ্যমে জানা যেত নারী সড়কে নিরাপদ নয়। তখনের তুলনায় এখন সমস্যা যে আরও বেশি তা বলে দিতে হবে না। সমস্যা আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে না পারা। এই সংকট থেকে মুক্তির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ যা হওয়া উচিত তা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কিন্তু সমাজে যদি গুরুতর পরিবর্তন ও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে সংকটের আশু সমাধান পাওয়া দুরূহই হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ