গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার কথা শুনলে অনেকেই হয়তো চমকে উঠবেন। কিন্তু এটা খুব স্বাভাবিক একটা কার্যক্রম শরীরের জন্য। গর্ভাবস্থায় নিজেকে শারীরিকভাবে আরও সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার কোনে বিকল্প নেই। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন কমে গিয়ে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। শারীরিক অবস্থায় গর্ভবতী মা যত সুস্থ থাকবে তার গর্ভাবস্থায় পরিবর্তনগুলো সে তত দ্রুত ও সহজভাবে মানিয়ে নিতে পারবেন নিজের সঙ্গে। যদি না শারীরিক জটিলতা না থাকে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত শরীরচর্চা করা হয় অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম হবে।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার বিশেষ কারণ ও উপকার সমূহ – পেশী শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কোমর ব্যথাসহ গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যথা ও শারীরিক জড়তা কমানো সম্ভব, ভালোমতো ঘুমাতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা কমানোর জন্য সহায়ক শরীরচর্চা, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়া প্রতিরোধ করা সিজারিয়ান অপারেশনের প্রবণতা কমিয়ে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ানো, ডেলিভারির সময় ফরসেপ-ভেনটুস জাতীয় যন্ত্র বা ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনা, প্রসবের পর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে ও প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ব্যায়াম, শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় নিয়মিত শরীরচর্চা।
গর্ভাবস্থায় কি ব্যায়াম কি ধরনের ব্যায়াম করবেন এই ধরনের প্রশ্ন মনে আসাটা খুব স্বাভাবিক। গর্ভাবস্থায় সাধারণ মানুষের মতো ব্যায়াম করা সম্ভব না। গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের ধরণগুলো বেশ ভিন্ন থাকবে। সে রকমই পাঁচ ধরনের ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়:
• গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়ই শ্যালো ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে বলা হয়। বেশ কার্যকরী গর্ভবতী অবস্থায় শ্যালো ব্রিদিং । বিছানার ওপরে শিরদাঁড়া সোজা করে বসে পা জোড়া করে সামনের দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার মুখ খুলে জোরে শ্বাস নিতে হবে। প্রতিদিন ৫ মিনিট করে করতে হবে শ্যালো ব্রিদিং।
• আরও একটি উল্লেযোগ্য ব্যায়াম স্টোমাক ব্রিদিং। বিছানায় পা ভাঁজ করে বসে শ্বাস নিতে হবে। শ্বাস নেওয়ার সময় একটি হাত থাকবে পেটের নিচের দিকে। অন্যটি ওপরের অংশে। এবার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে তা ধরে রাখতে হবে। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট করে করতে হবে।
• চেস্ট ব্রিদিং নরমাল ডেলিভারির জন্য খুব কার্যকরী। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুপা জোড়া করে দাঁড়াতে হবে। এবার দুহাত বুকের কাছে আনতে হবে। এবার নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে এক থেকে আট পর্যন্ত গুনতে হবে। নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ধীরে ধীরে।
• অল্টারনেটিভ ডিপ ব্রিদিং করার জন্য প্রথমে মটিতে বা বিছানায় শুয়ে টানা শ্বাস নিন। এক থেকে আট পর্যন্ত গুনতে হবে। কিছুক্ষণ তা ধরে রাখুন। এবার শ্বাস ছাড়ার সময় এক থেকে আট পর্যন্ত গুনে শ্বাস ছাড়তে হবে।
• উজাই ব্রিদিং ব্যায়মটি করলে গর্ভের শিশুর গ্রোথ ভালো হবে। উজাই ব্রিদিং এক ধরনের যোগ ব্যায়াম। মায়ের শরীরের শক্তিও বেশ বাড়ে। সাধারণ ভাবে আসন করার মতো পা ভাঁজ করে বসতে হবে। এবার জোরে জোরে শ্বাস নিতে হবে ও ছাড়তে হবে। এই সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে।
সম্পূর্ণ খালি পেটে কিংবা সম্পূর্ণ ভরা পেটে কখনোই ব্যায়াম করবেন না। এতে করে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও ব্যায়াম করার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় রাখুন। একেক দিন একেক সময় ব্যায়াম করার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তবে যে ধরনের শরীরচর্চা ফলো করুন না কেন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিবেন। কারণ আপনার শারীরিক অবস্থান অনুযায়ী আপনার শরীর চর্চার ধরন ধরুন ঠিক করা হবে। গর্ভবতী অবস্থা খুবই সংবেদনশীল অবস্থা একটি নারীর জীবনে। তাই কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।