নারী শ্রমিক হত্যা: সুষ্ঠু তদন্ত হোক
সম্প্রতি মানুষের মধ্যে মানবতার এতটাই ঘাটতি যে, অন্যের জীবনের কোনোই মূল্য তাদের কাছে নেই! একে অপরের প্রতি আক্রোশ প্রকাশেই যেন স্বস্তিবোধ করে বর্তমান সমাজের বাসিন্দারা। ফলে তারা অপরের জন্য হিংস্র পশুর মতো হয়ে ওঠে। সম্প্রতি গুম, খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি সবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়।
গণপরিবহন থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীরা অনিরাপদ। আর আমাদের দেশে একশ্রেণি অপরাধ করেও গায়ের জোরে পার পেয়ে যায়। বিধায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে! অন্যের প্রতি আক্রোশ এতটাই বেশি যে, হত্যার মতো ভয়াবহ কর্মকাণ্ড ঘটাতেও এশ্রেণি পিছু হাটছে না। দিনে দিনে গণপরিবহনগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে!
একদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে গণপরিবহনের হেল্পার, কনডাক্টর ও চালকের অবহেলা ও আক্রোশের কারণেও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আর নারীদের ক্ষেত্রে গণপরিবহনের রূঢ় আচরণ নতুন নয়। নারীর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বাজে আচরণ, যৌন হয়রানি, হত্যার ঘটনাগুলোও ঘটছে! আইনের কঠোর প্রয়োগ ব্যতীত এ ধরনের হিংস্র মনোভাব কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিককে তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে এমসিবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর বাসসহ চালক পালিয়ে যায়। পরে উত্তেজিত জনতা ওই পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে।
নিহত চম্পা বেগম (৩২) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ নিজগাঁও গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তিনি শ্রীপুর পৌর এলাকার বৈরাগীরচালায় হ্যামস গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক ছিলেন। চম্পা বেগমের ভাতিজা সুমন মিয়া জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর চাচি শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় ছোট বোন লাভলী বেগমের বাসায় গিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী বালু শ্রমিক জালাল উদ্দিন জানান, এমসিবাজারের কাছাকাছি পৌঁছার পর চলন্ত বাস থেকে ওই নারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় হেলপার। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে (নারী) মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এর আগে গত ২২ জুন শহিদুল ইসলাম নামে পোশাক কারখানার এক শ্রমিককে তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়।
একটি মৃত্যু আজীবনের কান্না। যে বা যার আত্মীয় হারায় তারাই বোঝেন স্বজন হারানোর কী জ্বালা! এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেলক্ষ্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ ব্যতীত এইশ্রেণির বোধদয় ঘটবে না। চলন্ত বাস থেকে যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। বাসের হেল্পার, কনডাক্টর এদের আচরণ খুব রূঢ়। আর নারীদের সঙ্গে এদের আচরণ আরও করুণ হয়।
ঢাকা শহরে অহরহ দেখা যায়, অনেক গণপরিবহন গেট লক করে রাখে। নারীকে উঠতে দেয় না। আবার এমনও পরিলক্ষিত হয় যে, যাত্রার দূরত্ব শুনেও নারীদের বাসে উঠানো হয়! যা অনৈতিক। এসবের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনের সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া নারীদের রক্ষা করা কঠিন! চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া চরম অপরাধ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।