নারীর ইচ্ছার লাগাম টানতে হবে
দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালানো যে কতটা কষ্টকর তা যার কাঁধে ভর করে একটি সংসার চলছে তিনিই জানেন। প্রতিটি দ্রব্যের বাজার দর এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস পড়ছে! এক হাজার টাকার একটি নোট হাতে নিয়ে বাজারে গেলে দ্রব্যে কিনে পকেট শূন্য! সঙ্গে মাথায় হাত! কোথায় আছি আমরা! কিভাবে চলবে সংসার? তবু মানুষকে বাঁচতে হচ্ছে। কারণ চাইলেই আত্মাহুতি দেওয়া যায় না!
অনেকেই আছেন যারা না জেনে-বুঝে এক ধাক্কায় বলে দেন, এখন দরিদ্র কেউ নেই! কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভেতরের চিত্র ভিন্ন। সত্যিকার অর্থে দরিদ্র যারা তাদের চেয়ে হীন অবস্থানে আছে মধ্যবিত্ত নামধারী সাধারণ জনগণ। তারা না পারে অন্যের দারস্থ হতে না পারেন মুখ ফুটে দুঃখের কথা বলতে! তাই তাদের দিনগুজরান যত কষ্টেই হোক না কেনো অন্যের সামনে নিজের পেটের ক্ষুধা লুকিয়ে রাখতে হয়। মুখে এক চিলতে হাসি এনে বলতেই হয় সব ভালো। হ্যাঁ এসব সাধারণ নিম্ম-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের ভালো থাকাটাই সবাই লক্ষ করেন ভেতরের বেদনা কেউ দেখেন না। দিনেশেষে দুঃখ বোঝার কেউ নেই! কিন্তু তবু পরিবারের ভার যার ওপর তিনি হাসি মুখে পৃথিবীর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন সন্তান -সংসারকে সবটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে! এক্ষেত্রে একমাত্র সঙ্গী হতে পারেন গৃহকর্মী বা নারী। সংসারের দায় যেমন একা নারীর নয় তেমনই সংসারের সবার চাহিদা পূরণ করে নিজেকে ক্লিশে-পাংশু বর্ণ করে ফেলার মানে নেই পুরুষের। এজন্য নারীকেও তার ইচ্ছেতে লাগাম টানতে হবে। সহমর্মি হতে হবে তার সঙ্গীর প্রতি।
আজকাল বিয়ে ভাঙছে। সংসারে কলহ। নিত্য ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই আছে। সত্যি কোনো একটি কারণে এগুলো ঘটছে না। যান্ত্রিক জীবনে যেমন অন্যকে মূল্যায়ন, শ্রদ্ধা-সম্মান, ভালোবাসা ও মনের আদান-প্রদান কমেছে ঠিক তেমনই বেড়েছে নিত্য পণ্যের দাম। কাজ করে যেটুকু জুটছে তাতে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যাশার লাগাম টানতে পারছেন না কেউ কেউ। তিনি নারী বা পুরুষ হোন সময়টা খারাপ তাই প্রত্যেকের জায়গা থেকে স্থির চিত্তের হতে হবে৷ নতুবা লাগামহীনতার কারণে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়।
দুর্মূল্যের বাজারে সবকিছুর ক্রয়মূল্য এতটাই চড়া যে, একদিনের সংসার চালাতে ন্যূনতম হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়। সত্যি বলতে এই সামান্য টাকায় কিচ্ছু হয় না। তবু মাংস বা কোনো দামী মাছ নয়। যদি একটু লবণ, তেল, পেয়াজ, মরিচ, আলু, ডাল, সব্জি হয় এবং ৫ সদস্যের পরিবার হয় তবে এই টাকায় সঙ্কুলান হওয়া যে কতটা কষ্টের প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন! এরওপর বাড়িতে একটি ছোট্ট বাচ্চা কিম্বা অসুস্থ বাবা-মা থাকলে তো কথায় নেই! সত্যি এক চরম দুঃসহ জীবনে প্রবেশ করেছে মানুষ।
কী এক বিভৎস সময়ে মানুষ দিনগুজরান করছে। প্রতিটি দ্রব্যের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ পরিমানে বেড়েছে। আগে যেই কাপড় কাঁচা সাবান ১৫-২০ ছিল আজ সেটা ৪০-৪৫, ছোট একটি দুধের প্যাকেট ৫০ টাকা তা এখন ১৫০, বাজারের সবচেয়ে কমমূল্যের মাছ তেলাপিয়া ২২০ টাক, পাঙাস ১৮০ টাকা! নিম্মমানের চালটাও ৫৫ টাকা। এবং প্রসাধন সামগ্রীর কাছে যাওয়ার দুঃসাহসও অনেকের নেই! এগুলো বাদ দিলেও কাপড়ের পরিষ্কারক তো নিত্য প্রয়োজনীয়! খাবার, ওষুধ এগুলোও জরুরি!
চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ দিয়ে গোটা একটি পরিবারকে চালাতে হলেও দিনে ১০০০ টাকায় কিচ্ছু হওয়ায় নয়। তারওপর মানুষের শরীর! রোগ-শোক আছেই। কিন্তু একটু বিবেচনা করলে দেখা যায়, একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর বেতন পান ১৫-২০ হাজার। সর্বোচ্চ যদি ধরাও যায় ৩০-৪০ হাজার। যদি তা খুব কোয়ালিফাইড চাকরি হয়। নতুবা ১৫-২০ সেই সীমাবদ্ধ! তবে এই ব্যক্তির শহরে বসবাস করে সামান্য টাকায় সংসার চালানো কতটা কষ্টের! তা কি সত্যি কর্তৃপক্ষ একবারও ভেবে দেখেছেন? যেহেতু সিন্ডিকেটের ওপর কোনোই নিয়ন্ত্রণ নেই, বাজার মূল্যের ওপর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই, অসাধু ব্যক্তিদের রমরমা ব্যবসা তাহলে এখন মানুষেরই তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। মানুষকে তো বাঁচতে হবে। তাই নারীকেই তার প্রত্যাশায় লাগাম টানতে হবে। সংসার চালাতে যেখানে দিনে ২ টো ডিম নাহলে চলতোই না সেখানে ১ টা ডিমের ভাগ করে খাওয়া শিখতে হবে! প্রয়োজনের অতিরিক্ত জামাকাপড়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অতিরিক্ত কেনা বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই নারীকেই লাগাম টানতে হবে। এ সময়কে যাপন করতে হলে আর কোনো অপশন মানুষের নেই! সত্যি নেই। পরিবারের সবার চাহিদা যতটা সীমিত ছিল তার থেকল আরও সীমিত হতে হবে। আমাদের মায়েরা, গৃহকর্মে নিপুণা স্ত্রী তা অবশ্যই করেন। তবু প্রত্যাশার লাগাম টানা জরুরি। নতুবা একা উপার্জনক্ষম ব্যক্তির নাভিশ্বাস তো উঠছেই তিনি আরও পাগলপ্রায় হয়ে পড়বেন! এছাড়া বর্তমান বর্বর সময়ে বেঁচে থাকা দায়!
নারীরা মমতাময়ী-করুণাময়ী। নারীদেরই এখন সজাগ হতে হবে। যেহেতু মাথার ওপর সত্যি আর কারও ছায়া নেই বলেই বোধগম্য তাই নারীকেই লাগাম টানতে হবে৷ পরিবারকে বাঁচাতে, সঙ্গীনিকে চাপমুক্ত- ভারমুক্ত করতে নারীকে সহোযোগিতা-সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।