সাভারে ছাত্রীনির্যাতন: জড়িতদের কঠিন শাস্তি হোক
দিন দিন নারী নির্যাতনের হার প্রবলভাবে বেড়েছে। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে অবরুদ্ধ রাখা নতুন নয়। নির্যাতনও নতুন নয়। তবে কৌশল বারাবরের মতো পরিবর্তন করে দুর্বৃত্তরা। আর যুগের পরিবর্তনে একশ্রেণির বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ নামের হীন জীব নারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। নারীকে শিকারে পরিণত করছে। এজন্য তথ্য-প্রযুক্তির নিকৃষ্ট ব্যবহারও এ শ্রেণি করছে। বর্তমানে যেভাবে শিশু-কিশোরী তথা নারী নির্যাতন বেড়েছে তাতে আইনের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের রক্ষা করা কঠিন! নারী নির্যাতন রুখতে হলে আরও কঠোরভাবে মাঠে নামতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে।
সাভারের একটি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে অসভ্য, বর্বরশ্রেণি! মানুষ কত হীন হলে এতটুকু ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের ওপর এভাবে পাশবিক নির্যাতন করতে পারে! গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী জানা যায়, সাভারে স্কুলছাত্রীকে নির্যাতন, ধর্ষণচেষ্টা ও পাঁচতলা থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেওয়া মেহনাজ মিশুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী সাভারের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছেন। এতে মিশু গ্রেপ্তার হলেও তাঁর স্বামী আতিক পলাতক রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণচেষ্টা, নির্যাতন, বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার চেষ্টা করেন আসামিরা। রাজি না হলে তাকে সিগারেটের সেঁকা ও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। পরে বাসার পাঁচতলা থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয় সে। তবে হুমকির মুখে প্রাথমিকভাবে কাউকে বিষয়টি জানায়নি। পরবর্তীকালে বিচারের আশায় আইনের দারস্থ হয়েছে ভুক্তভোগী। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হয়েছে তেমনি নারী হয়ে আরেক কিশোরীর প্রতি এমন অত্যাচারে মদদ জোগানো পাশবিকতার পরিচয়। বর্তমানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার-বিবেচনা করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতেই হবে। যদি পাওয়ার-পজিশনের দোহায় দিয়ে ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যায় তবে কিশোরীটির জীবন যে আরও কতটা দুর্বিষহ করে তুলতে পারে তা বোঝায় যায়! এমন বর্বরোচিত নিপীড়নের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি বিধান করা উচিত।
ভুক্তভোগী কিশোরীকে ধর্ষণ, নিপীড়নের চেষ্টার পর পাঁচ তলা থেকে ফেলে দেওয়া কতটা ভয়াবহ! মেয়েটির মৃত্যুও হতে পারতো! বাবা-মায়ের প্রাণের ধন হারিয়ে যেতো। এই অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তি হওয়া আবশ্যক। নতুবা ক্ষমতার দোহাই দিয়ে এমন আরও অসংখ্য নির্যাতন চালতে থাকবে! এদের লম্বা ডানাকে খাটো করতে হলে সত্যি বলতে আইনের উপর্যুপরি বাস্তবায়ন হতে হবে। কোনোরকম মিথ্যা বা কারচুপি করে আইনের ফাঁক গলিয়ে বের হলে তা মানুষের জন্য হুমকির। মানুষ বিশ্বাস হারাতে বসবে সত্য-মিথ্যার। আইনের চোখে অপরাধী যদি ক্ষমা পায় তাহলে এদেশের সাধারণ মানুষের ভরসা কী? কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ!
সাভারে ছাত্রী নির্যাতনের যথাপুযুক্ত প্রমাণসহ অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ও ঘটনার ঘনঘটা সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া গত্যান্তর নেই। তাই শিশু-কিশোরী-নারী নির্যাতন হলে আইনের আওতায় আনতে হবে। কঠোরভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই মানুষের ভরসারজায়গা দখল করবে আইন-আদালত। মানুষ তার ওপর হওয়া অন্যায়ের বিচার হওয়ার জন্য আইনের আশ্রয় নীতি ভীতিপ্রদ হবে না। নারী নির্যাতনের সঠিক বিচার হোক। নারীরা অত্যন্ত কিছুটা হলেও মুক্তি পাক এই পাশবিক দানবদের ছায়া থেকে!