পরিচয় গোপন করে বিয়ের কঠোর শাস্তি ভারতে, আমাদেরও ভাবতে হবে
সমগ্র বিশ্বেই নারী নির্যাতনের নানাবিধ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। তবে নির্যাতনের কৌশল একই নয়। বরং নারীকে নির্যাতনের জন্য একশ্রেণি বিবিধ পথাবলম্বন করে। কখনও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেইলিং করে থাকে আবার কখনো এই চক্র নারীদের সঙ্গে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক স্থাপন করে ফাঁদে ফেলে। তবে এসব থেকে নারীকে রক্ষা করতে ভারতীয় পার্লামেন্ট কঠোর আইনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা ভবিষ্যতে নারীদের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিগণিত হবে। ১২ আগস্ট বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমনই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যা সত্যিই নারীদের জন্য বড় বার্তা বহন করছে।
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, পরিচয় গোপন করে কোনো নারীকে বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিয়ে, পদোন্নতি কিংবা চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তার সর্বোচ্চ সাজাও হবে ১০ বছরের জেল। দেশের নারীসমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার একগুচ্ছ নতুন আইন আনতে চলেছে। তার মধ্যে এটি অন্যতম।
গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় ‘ভারতীয় দণ্ডবিধি’–র নাম পরিবর্তন করে ‘ভারতীয় ন্যায়সংহিতা’ রাখার প্রস্তাবসহ একাধিক নতুন আইন আনার কথা জানান। দেশের আইনব্যবস্থা বদলানোর তাগিদে আনা নতুন বিলে ‘নারীদের যৌন নিগ্রহ’ রুখতে বেশ কিছু নতুন ধারা সংযোজিত করেন। এ সম্পর্কে জানা যায়, তিনটি বিলই অবশ্য আরও বিশদ পর্যালোচনার জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিল পেশের সময় কর্তৃপক্ষ জানান ‘নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ ও সেই কারণে তাঁদের যেসব সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলো কমানোর লক্ষ্যে নতুন এই বিল আনা হয়েছে। বিয়ে, চাকরি, পদোন্নতি বা অন্যান্য সুবিধার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসে রাজি করানো গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।’ আর এ থেকে পরিত্রাণ পেতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ সম্পর্কে গণমাধ্যম বরাত আরও জানা যায় যে, ইতোপূর্বে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সংসর্গের বিষয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা ছিল না। সরকার এখন যে নতুন আইন আনতে চাইছে, তাতে এই বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনে ‘প্রতারণার’ মাধ্যমে বিয়ে, চাকরি, পদোন্নতির পাশাপাশি পরিচয় গোপন করে বিয়েও অন্তর্ভুক্ত হবে। সর্বোচ্চ সাজা হবে ১০ বছরের কারাবাস।
দেশটিতে পরিচয় গোপন করে বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশটিতে এ ধরনের আইন এক কার্যকরী পদক্ষেপ বলা যায়। বিভিন্ন রাজ্যেই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তাই দেশটিতে নারীদের রক্ষায় নতুনভাবে ভাবনাচিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত যাচ্ছে সরকার।
বিভিন্ন রাজ্যে ‘লাভ জিহাদ’-এর ঘটনা যত বাড়ছে, সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে পরিচয় গোপন করে বিয়ে। শাসক দলের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমান পুরুষদের পরিচয় গোপন করে হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করতে দেখা যায়। তারপর ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। নতুন আইন এই প্রবণতা কমাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া নতুন আইনে দলবদ্ধ ধর্ষণের সাজাও কঠোর করা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণ প্রমাণিত হলে অপরাধীদের ২০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। ধর্ষণের শিকার নারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। একই সুপারিশ করা হয়েছে গণপিটুনিতে কেউ নিহত হলে অপরাধীদের সাজার ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি ভারতে জাতিগত সহিংসতায় নারীদের কীভাবে অসম্মানিত করা হয়েছে তা গোটা বিশ্বই দেখেছে। শুধু তাই নয়, দেশটির বৃহৎ জনসংখ্যা যেমন ঠিক ততটাই জটিলতাও দেখা যায়। নারী ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা, অনলাইনে হুমকি-ধমকি সবই এখন চলছে। ফলে নিঃসন্দেহে নারীদের রক্ষায় এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে বর্ণিত আইনের সঠিক বাস্তবায়ণ হলে নারী নির্যাতন-হয়রানি কিছুটা হলেও কমে আসবে। তাই এমন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশটিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। পুরো বিশ্বকেই নারীদের রক্ষায় এমনভাবে ভাবতে হবে।
মনে রাখতে হবে, একটি সমাজ-সংসার ও রাষ্ট্র গঠনে নারী অন্যতম ভূমিকা পালন করে। নারীকে যোগ্য সম্মান-মর্যাদা-শ্রদ্ধা করা দেশ ও জাতিকে কল্যাণমুখী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।