আফগানে নারীশিক্ষায় হস্তক্ষেপ: বিশ্বাসী রুখে দাঁড়াও
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের শাসন-শোষণ নতুন নয়। তবে ক্রমাগত উগ্রবাদী, কট্টরপন্থীদের রমরমা বিচরণ সমাজে বেড়েই চলেছে। যা সমূলে বিনাশ না করতে পারলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী নারীদের জন্য আরও ভয়াবহ এবং মারাত্মক হয়ে উঠবে! এই শ্রেণি নারীকে অবরুদ্ধ করতে যতটা সম্ভব তারও অধিকভাবে নারীকে হেনস্তা করেই চলেছে! কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের তেমন কোনো সরব ভূমিকা নেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই শ্রেণির মতাদর্শে এসে পুরো দেশে নারীকে ঘরে বন্দি করে ফেলা হয়েছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের জীবন নরকে পরিণত করেছে। এ সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবে আষ্টেপৃষ্টে নারীর জীবন ওষ্ঠাগত। পার্কে বেড়ানো নিষিদ্ধ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ, পার্লার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নারী পরিচালিত রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বর্বরোচিত নিপীড়নের শেষ কোথায়!
সর্বশেষ তালেবান সরকার জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গজনি প্রদেশের তালেবান শাসিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্কুল ও স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের প্রধানদের বলেছেন যে, ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের প্রাইমারি স্কুলে পড়ার অনুমতি নেই।
এতে আরও বলা হয়, কিছু এলাকায় প্রচার ও নির্দেশনা মন্ত্রণালয় (যা পূর্বে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত ছিল) মেয়েদের স্কুলের প্রধানদের অনুরোধ করেছিল যে, তৃতীয় শ্রেণির ওপরে অধ্যয়নরত মেয়েদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে।
পূর্ব আফগানিস্তানের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী বিবিসিকে জানায়, তাদের বলা হয়েছিল যে, যে মেয়েরা লম্বা এবং বয়স ১০ বছরের বেশি তারা স্কুলে প্রবেশ করতে পারবে না। গত বছরের ডিসেম্বরে নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালেবান। সেসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘও এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। তবে এর মধ্যেই যেন সব সীমাবদ্ধ থেকে গেছে! তালেবানদের এই বর্বর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী যদি একজোট না হয় তবে এই কট্টরপন্থীদের বর্বরতার ভয়াবহ প্রভাব আমাদের সমাজেও প্রভাব ফেলবে।
একটি সমাজ গঠন হয় নারী-পুরুষের সম্মিলিত সহোযোগিতায়। কখনোই পুরুষের একার দ্বারা সব সংঘাত-সংকট প্রতিহত করা সম্ভব নয়। কোনো কালেই তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু উগ্রবাদী পুরুষতন্ত্র নারীকে দাসী বানিয়ে রাখতে চায়। রাজদরবারে যেমন এক রানী থাকলে তার আরও উপপত্নী-রক্ষিতা-দাসী থাকতো এ যুগ যেন ঠিক ততটাই বর্বরতায় মিশছে! নারীকে বিছনায় নিয়ে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতেই নারীকে অশিক্ষিত- বন্দী করে রাখার মনোবাসনা তাদের! তালেবানদের এমন হুজুগে কার্যক্রমে নারীরা যে কী প্রচণ্ড পরিমাণে নির্যাতনের শিকার তা সে দেশের নারীরা বিভিন্নভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেছে! এমন হিংস্রতা পশুরও নেই! তালেবানদের এমন নিপীড়নকে রুখতে হলে আন্তর্জাতিক মহলকে কুটনৈতিক-রাষ্ট্রিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাতে কতটা সুরাহা হবে সেও সত্যি বোঝা দায়! তবু নিশ্চুপ থেকে মরার চেয়ে সরব হওয়া জরুরি।
তবে এলার্মিং বিষয় এই যে, তালেবান মেয়েদের এমন ওপর এমন নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এ দেশের একশ্রেণির বর্বর-হীনচেতা-মানসিক বিকারগস্তরাও তাদের নিপীড়নকে সাধুবাদ জানাচ্ছে! এর মধ্যমে এটা বোধগম্য হয় যে, এদেশেও এদের প্রভাব ব্যপাকহারে বেড়েছে! ফলে এমন বর্বরদশা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের দেশে যেমন কঠোর শাসন জরুরি। ধর্মকে পুঁজি করে নারীকে অবরুদ্ধ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এবং বিশ্ববাসীকে তালেবান নারীদের রক্ষায় পাশে দাঁড়ানো জরুরি। নতুবা এই কালো থাবার ছোবলে নারী জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জাতি বিলীন হয়ে যাবে। তাই এখনই সময় মানবিকবোধের উন্মেষ ঘটানো প্রয়োজন। বিকারগ্রস্ত-উন্মাদ-উদ্ভটদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে নারীদেরই। পৃথিবীর সব নারী নিরাপদে থাকুন। সুস্থ থাকুন। হায়েনাদের কালো থাবাকে প্রতিহত করুন।