কুড়িতেই বুড়ি নয়
একজন নারী জন্মের পর থেকে তার জীবনে অনেক ধাপ পার করে থাকে। শৈশব-কৈশোরের পালা চুকিয়ে পা দেয় ত্রিশের কোটায়। ঠিক তখন থেকেই তার জীবনে চলে আসে নতুন কিছু পরিবর্তন। আর এখনকার নারীরা ঘরে ও বাইরে দু’জায়গাতেই সমান পারদর্শী।
বয়স পঁচিশের পরেই সংসার, বাচ্চা ও ক্যারিয়ার নিয়ে তারা এত ব্যস্ত হয়ে যায় যে তারা আয়নাতে নিজেকে দেখার সময়টুকুও যেন পায় না। কিন্তু এই ছুটে চলার মাঝেও দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার সময় চেয়ে নিতে হবে৷ মা হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি নারী যেন শুধু ঘুম ভাঙে তার সন্তানের জন্য। কিন্তু জীবনের যেকোনো সময় বা বয়সে এসেও নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া যায়। নিজেকে ভুলে শুধু অন্যের জন্য বেঁচে থাকার ফলে ঘর ও বাইরে দু’দিকে সামলে উঠতে তাদের স্ট্রেসের শিকার হতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ দেখা দেয় নানাবিধ মানসিক সমস্যা।
গবেষণা বলে ৩০-এর পর অনেক নারী বিষণ্নতার শিকার হন৷ তখন তারা সব কিছু থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলতে চান। এই সময়টা অনেকের কিছু শারীরিক পরিবর্তনও হয়ে থাকে, যা অনেকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। যেমন, ৩০-এর পরেই শরীরের হরমোন লেভেল কমতে শুরু করে পাশাপাশি কোলোজেন, ইলাস্টিন, ভিটামিন, ত্বকের টিস্যু ভালো রাখে যে উপাদান তা কমতে থাকে। তখন নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় বলিরেখা, স্কিনে কালচে ভাব, হাড় ক্ষয়, চুল পড়া কিংবা ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। ওজন বেড়ে যাওয়া ও ত্বকের যে পরিবর্তন আসবার কারণে অনেকে হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং ক্রমাগত অন্য নারীদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে থাকে। নিজেকে সব কাজের অযোগ্য মনে হতে থাকে। যেকোনো কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে ও ভাবতে থাকতে ‘আমার আর বয়স নেই’।
তবে নতুন করে জীবন শুরু করার কোনো বয়স নেই বলে জানান, মনোবিজ্ঞানী তানিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি নারীর উচিত সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ধন্যবাদ দেওয়া৷ কারণ সে হয়তো অনুভব করছে না কিন্তু আসলে সে সবদিক অসাধারণভাবে সামলে নিচ্ছে৷ অনেক নারী আছে যারা স্বামী বা পরিবারের সদস্যরা তার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে না বলে মন খারাপ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সবার আগে নিজের মর্ম নিজেকেই বুঝতে হবে, তবেই অন্যেরা আমাদের শ্রদ্ধা করবে। কিন্তু আমাদের এটাও বুঝতে হবে সবার প্রশংসার ভাষা এক হয় না। অনেক পরিবারেই মুখে কিছু না বললেও তারা আসলে আমাদের কাজের জন্য গর্ববোধ করে। তাই সব কিছু ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে। তবেই আমাদের জীবন সহজ হবে।
সবার পছন্দ-অপছন্দের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের শখের জায়গাকে প্রাধান্য দিতে হবে। দিনের মধ্যে কিছুটা সময় নিজের মতো কাটাতে হবে যেমন বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা কিংবা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা যেতে পারে ড্রাইভিং কিংবা সাঁতার কাটা৷ এতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়৷ কাজের স্ট্রেস কমাতে পরিবারের সবার সঙ্গে ঢাকার বাইরে ঘুরে আসা যেতে পারে, স্থান পরিবর্তনের ফলে অনেক স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমে যায়৷ মনে রাখতে হবে, আধুনিক সময় কুড়িতেই বুড়ি এই প্রবাদে কেউ বিশ্বাসী না, তাই যতটা সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে না রেখে প্রফুল্লে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৩০ এর পর অনেক ধরণের শারিরীক জটিলতাও দেখা দেয় কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে৷ তাই ২৫ পেরোতেই নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে৷ এই সময়টা ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ব্যালেন্স ডায়েট করতে হবে। এছাড়া ব্যায়াম ও ইয়োগা করা যেতে পারে। ইয়োগা করলে মনের অস্থিরতা কমে ও মন শান্ত হয়। সময় করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে, হাঁটার ফলে ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধির উপায় ও মন ভালো থাকে। হাড় ক্ষয় ও ক্যালসিয়ামের অভাব রোধে রোজ ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই খাবারের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। এছাড়া ভিটামিন ডি জন্য হালকা রোদ পোহাতে হবে। জীবন মানেই পরিবর্তনশীল, যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো আমাদের ধারাবাহিকভাবে অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হবে। তাই জীবনের সব পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে।