এআই প্রেজেন্টার: প্রযুক্তিতেও নারী পণ্য
এআই নিয়ে সারাবিশ্বেই চলছে তোড়জোড়। তবে, সম্প্রতি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে এআই (Artificial intelligence) প্রেজেন্টার। এআই হলো মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। বর্তমানে এআই এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যে, সম্প্রতি এর বিশেষ কিছু অবদানকে ঘিরে গোটা বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে। তবে মানুষের জন্য এআই কতটা কল্যাণকর তা প্রশ্নবিদ্ধ৷ কিন্তু তারচেয়েও বেশি যে বিষয়ে নজর কাড়ছে তা হলো, এআই এখন পর্যন্ত যে অবদানে সাড়া ফেলেছে অর্থাৎ দুজন নিউজ প্রেজেন্টরই নারী!
গত ৯ জুলাই ভারতে প্রথম এআই সংবাদ উপস্থাপিকার সাক্ষাৎ মেলে। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। এআই অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য সাবলীল ভাষায় সংবাদ উপস্থাপন করতে দেখা গেছে তাকে। এই নারীর নাম দেওয়া হয়েছিল লিসা। ভারতের ওড়িষ্যার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে তাকে সংবাদ পাঠ করতে দেখা গেছে। যা ভারতের প্রথম আঞ্চলিক এআই সংবাদ উপস্থাপক। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরালও হয়েছে। এরপরেই ভারতের পাওয়ার টিভি নামে কন্নড়ের একটি চ্যানেল, যা সম্প্রতি নিজস্ব এআই উপস্থাপক ‘সৌন্দর্য’ শুরু করে একই রকম যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।
যদিও চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া ২০১৮ সালে বিশ্বের প্রথম এআই সংবাদ উপস্থাপক শুরু করেছিল, তবে ভারত এই বছরের এপ্রিলে দেশের আজতক নিউজ চ্যানেল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এআই সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে তাদের প্রথম এআই নিউজ উপস্থাপক ‘সানা’ চালু করেছিল।
পরবর্তীকালে ২০ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো এআই সংবাদ উপস্থাপিকা দেখে গেছে। এই ডিজিটাল জগতে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ২৪-এর সংবাদ উপস্থাপক ফারাবি হাফিজ সন্ধ্যা ৭টার বুলেটিনে ‘অপরাজিতা’ সামনে নিয়ে আসেন, যা একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।
নেভিব্লু শার্টের ওপর ঘি রঙের ব্লেজার পরে ‘অপরাজিতা’ প্রথমে তার সহ-উপস্থাপকদের অভিবাদন জানায় এবং তারপরে তার প্রতিবেদন উপস্থাপনের আগে দর্শকদের স্বাগত জানায়। তিনি রাত ১১টায় টিভি চ্যানেলে আধা ঘণ্টা ব্যাপী প্রযুক্তিবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন।
বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংবাদ উপস্থাপক ‘অপরাজিতা’ বুধবার রাতে চ্যানেল ২৪-এ আত্মপ্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তবে বিস্ময়করভাবে এই সংবাদ উপস্থাপকরা সবাই নারী। এর প্রধান করাণ কী? নারীকে পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা খুব সহজসাধ্য বলে? এজন্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়ও নারীর অংশগ্রহণ?
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার যে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন নেই তা এসব ছোট ছোট অংশগ্রহণই প্রমাণ করে। নারীকে কীভাবে বাজারজাত করা যায়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আগ্রাসী মনোভাবের শিকার করা যায় তা এ সমাজ আজও পোষণ করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তো নারীর জায়গায় পুরুষকেও স্থাপন করা যেতো। কিন্তু নারীর সৌন্দর্য দিয়ে দ্রুত আকৃষ্ট করার মাধ্যম বিনোদন জগৎ থেকে শুরু করে সর্বত্র তা আবারও প্রমাণিত। নারীকে ভোগ্যপণ্য করে তুলতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মার্কেটিং পলিসিতে এগিয়ে থাকা যায়! বিভিন্ন কারণে আমরা আধুনিক যুগে প্রবেশ করেও নারীর প্রতি সুদৃষ্টি দিতে সক্ষম হতে পারেনি! নারীকে যেকোনোভাবে উপস্থাপন করা এ সমাজের অলিখিত সংবিধান হয়ে দাঁড়িয়েছে! নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হোক। সব স্থানে নারীকে হেয় করা, নারীকে ভোগ্যপণ্য করে তোলা, নারীকে বাজারজাত করার মানসিক বিকৃতি পরিহার করুক এ সমাজ।