ইরানে নারীর হিজাব নিয়ে ফের হস্তক্ষেপ
প্রত্যেকটি মানুষের স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার অধিকার আছে। কারণ মানুষ স্বাধীন জীব। অবলা পশুর মতো খাঁচায় পুরো মানুষকে রাখা যায় না। ‘স্বাধীনতা হীনতায়’ কেউ বাঁচতে চায় না। কিন্তু বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আজ হিজাব, নারীর চলাফেরার ওপর নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান। বিশেষ করে যারা ধর্মীয় দিক থেকে ইসলামি শাসনের আজ্ঞাবহ তারাই এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করছে।
ইরানে হিজাব না পরা নারীদের শনাক্ত করার জন্য প্রকাশ্য স্থানগুলোয় গোপন ক্যামেরা স্থাপন করেছে ইরান। সেদেশের পুলিশ জানিয়েছে, যে নারীরা চুল ঢাকা কাপড় পরবেন না, তাদের ‘পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে’ লিখিত বার্তা পাঠানো হবে। পুলিশের দাবি, হিজাব আইনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর ফলে সেটি বন্ধ হবে।
গত বছর হিজাব ঠিকমত না পরার অভিযোগ তুলে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাহশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা রক্ষাকারী পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। আবারও নতুনভাবে নৈতিকতা পুলিশের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তারা কোনো নারী হিজাব না পরলে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে আবার সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। ইরানে হিজাব প্রসঙ্গ নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই নারীদের হিজাব পরা নিয়ে ইরানে তুমুল ঝড় উঠেছে!
কিন্তু কথা হলো নারীকে অবরুদ্ধ করা কতটা যৌক্তিক?
ধর্ম কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। এমনকি এটা কোনো বাইরের আবরণ নয়। এটা আত্মিক উপলব্ধি। মানুষ মনের উপলব্ধি থেকেই স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করেন। তার জন্য ঘটা করে কোনো সরব তোলা উচিত নয়। কথা হলো যদি ধর্ম পালন, ধর্ম মান্য করা শুধু দেখানোর বিষয় হয় তাহলে সেখানে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। বহির্বিশ্বে নারীর প্রতি যে ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু হয়েছে কোনোভাবেই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। মানুষ নিজের ইচ্ছেয় বাঁচবে। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করবে। জোরজবরদস্তি মানুষের সঙ্গে চলে না। ফলে জোর কোর চাপিয়ে দিয়ে কোন ধর্ম পালনে কাউকে নির্যাতন করা অনুচিত। মূলত নারী বিদ্বেষ থাকার কারণে ধর্মের নামে এমন ভণ্ডামি গুরুতর অন্যায়। মানুষ কোনো পশু নয় তাকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে পোষ মানানো যাবে! আধুনিক যুগে এসেও এমন পুরুষতান্ত্রিক শোষণ নিঃসন্দেহে মূর্খের প্রলাপের মতো!
মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে জোর বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। আজও ভেতরে ভেতরে নারীরা ফুঁসছে। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া অমানবিক, নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞ। কোনো মানুষের ইচ্ছে অনুযায়ী ধর্ম পালন করবেন। সেখানে ধর্মের নামে এমন শোষণ কেন? কোন ধর্মে বলা হয়েছে নারীকে এমনভাবে শোষণ করতে? যদি তাই বলা হয় তাহলে আজকের যুগে এটাই বলতে হয়, মানব কল্যাণ, মানুষের কল্যাণের বিপরীত বা পরিপন্থী সব কিছুই বাদ দেওয়া উচিত। মানুষ মানুষের মতো গড়ে উঠবে। বেড় উঠবে। তা কৃত্রিমভাবে বেড়ে উঠতে হবে কেন? আজকের যুগে এত কেন ধর্ষণ? পুরুষ কেন ধর্ষণ করছে? তাদের মোটিফ নারীকে অবরুদ্ধ করা। পুরুষ কেন নিজের লোভ-লালসা-চোখ- চলাফেরা সংযত করে না? এই ভণ্ডামি কেন? এসব ভণ্ডামি ছেড়ে মানবতার গান গাওয়া উচিত। যদি মানবিক হয়ে গড়ে ওঠে মানুষ তবে সমাজ থেকে এসব শোষণ-নিপীড়ন উঠে যাবে। কিন্তু ধর্মকে মানুষ ব্যবহার করে। তেমনই ইরান নারীদের অবরুদ্ধ করতে ধর্মকে ব্যবহার করছে। এসব পশুত্ব, বর্বরতাকে রুখে দিতে নারীদেরই জাগতে হবে। মনোবল হারালে চলবে না।
একটি পাখিকেও খাঁচায় পুরলে ছটফট করে। কারণ তার জন্য রয়েছে উন্মুক্ত আকাশ। সে কেন খাঁচায় থাকবে। স্রষ্ট্রা তাকে খাঁচা তো দেয়নি। দেয় মানুষ। বর্বর যিনি তিনিই কেবল অবলা পশুকে খাঁচায় ভরে বিকৃত আনন্দ পান! মানবিক মানুষ কখনও পশু হোক আর মানুষ হোক তাদের কষ্ট দিতে পারে না। ইরানী নারীদের হিজাব নিয়ে যত ঘনঘটা, জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছে ইরান সরকার তার নেপথ্যেও রয়েছে এমন বিকৃত কাঙ্ক্ষা। নারীকে অবরুদ্ধ করে নারীর পায়ে বেড়িয়ে পরিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে চায়। দাস প্রথা চলে গেলেও তাদের মগজে আজও দাসত্ব বিরাজমান। তাইতো নারীকে স্বাধীন দেখতে এ সমাজের এত কষ্ট। ইরানি নারীদের আওয়াজ তুলতে হবে যাতে তারা অবরুদ্ধ প্রাণী হয়ে নয় বরং নিজের মতো স্বাধীনভাবে বাঁচতে সক্ষম হয়।