বাকপ্রতিবন্ধী মহিমা হোক প্রেরণার উৎস
সমাজে নারীর প্রতিবন্ধকতা চিরন্তন। আজ অবধি এ থেকে নারীর উত্তরণ ঘটেনি। তার প্রধান এবং একমাত্র কারণ মানসিকতা। মূলত নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই নারীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হন। প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হয়। সমাজের এই হীনতাকে ডিঙিয়ে যে বা যারা আলোর পথে হাঁটতে পারেন তারাই একসময় প্রেরণার উৎস হন।
যে সমাজ নারীকে টেনেহিঁচড়ে সবসময় ঘরে অবরুদ্ধ রাখতে চায়, দাসী ও ভোগ্যপণ্য হিসেবেই গণ্য করতে চায়, সেই সমাজে মহিমার মতো বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ের জীবনধারণ করা কতটা কষ্টদায়ক তা অনুমানযোগ্য। তবে সবচেয়ে আশার বিষয় এই যে, মহিমা সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে তার নিজের লক্ষে এগিয়ে গেছেন। নিজের শত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছেন। দেশকে তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
গত ১৭ জুন থেকে ২৫ জুন বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশেষ অলিম্পিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কয়জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে মাহিমা একজন। সে সাঁতারে সকল প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক জয়লাভ করেছে।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশেষ অলিম্পিকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছেন বানিয়াচংয়ের এই বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী। মহিমার এই উদ্দমতা, নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই নেই। কারণ তারা নিজেদের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এতটাই ব্যাতিব্যস্ত থাকেন যে, সবসময় সেটার মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকেন! নারী হয়ে জন্মে সমাজ-পরিবার কেউই পাশে নেই। শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনে এগুতে ভয় পান তাদের জন্য বাকপ্রতিবন্ধী মহিমা একটি উদাহরণ।
প্রকৃতার্থে প্রতিকূলতা থাকবেই। জীবনের জার্নিটাই এরকম। শুধু সমস্যাকে জিইয়ে রেখে যারা হতাশায় ভোগেন, কিছু না পাওয়ার ব্যর্থতায় মৃত্যু কামনা করেন মহিমা তাদের জন্যও উদাহরণ। মনোবল থাকলে, ভেঙে না গিয়ে ততটাই সুউচ্চ হয়ে ওঠার দক্ষতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যতটা হলে একসময় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করা সম্ভব। বাকপ্রতিবন্ধী মহিমা যখন স্বর্ণপদক জিতছেন তখন তার এই সাফল্য প্রশংসার তো বটেই সেইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি নারীর প্রেরণার উৎস। আলোর উৎস। এখন থেকেই ফিনকি দিয়ে যে আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে নারীদের জীবনে সেই আলোর পথ গ্রহণ করতে হবে। জীবন চলার পথে হার না মানার গল্পগুলোই একসময় মানুষের শক্ত মেরুদণ্ড গঠনের সহায়ক হয়ে ওঠে। তেমনই মহিমা তার অর্জন দিয়ে জীবনকে নতুনতরভাবে বুঝতে ও জানতে শিক্ষা দিলেন।
যখন সবাই যান্ত্রিক যুগে বাস করছে। হতাশা-স্বপ্নভঙ্গের গল্পে মশগুল ঠিক তখন মহিমা জয় করেছেন জার্মানীর বার্লিনে বিশেষ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক। এই স্বর্ণপদক ও তার শক্তিকে এখন পৃথিবী কুর্নিশ করতে বাধ্য। কারণ মহিমা তার মেধা, পরিশ্রম ও সাধনা দিয়ে নিজেকে সেই জায়গায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। নারীর জীবনেই নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা আসবেই। কিন্তু মহিমাদের মতো গুণী ও সহসী নারীদের অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়ে আমাদের আপামর নারী সমাজ এগিয়ে যাওয়ার ব্রত গ্রহণ করুক। আলোর পথে হাঁটতে হোঁচট খেলেও থমকে না যাক বরং দ্বিগুণ গতিতে সম্মুখে অগ্রসর হোক। তবেই নারীর মুক্তি।