নারী শান্তিরক্ষী বাড়ানোর প্রস্তাব: সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হোক
আমাদের সমাজে নারীর প্রতি নানাবিধ বিধিনিষেধ থাকলেও দিনে দিনে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। সব প্রতিবন্ধকতাকে দলে-মুষড়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে বিশ্বের বুকে। নারীদের অংশগ্রহণ প্রতিনিয়তই আপামর বাঙালি নারীর বুকে আশা জাগায়। জীবনচলার পথকে কণ্টকমুক্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারীদের অংশগ্রহণ কম নয়। এবার এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।
২৫ জুন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন
বলেন, জাতিসংঘের ‘ইউনিফর্মড জেন্ডার প্যারিটি কৌশল’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সব পর্যায়ে তাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবল সমর্থক। তিনি আরও বলেন, সর্ব-মহিলা গঠিত পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) কন্টিনজেন্টগুলো ছিল সক্রিয় উৎসাহ এবং সমর্থনের প্রতিফলন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি উচ্চপদস্থ সেনা ও পুলিশ অবদানকারী দেশ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও লিঙ্গ সমতার উন্নয়নে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতি ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে, টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তুতিমূলক সভার প্রতিপাদ্য, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারী’ বাংলাদেশের কাছে প্রিয় মূল্যবোধ ও নীতির সঙ্গে গভীরভাবে অনুরণিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, শান্তিরক্ষা মিশনে নারীদের অর্থবহ অংশগ্রহণ শুধু লিঙ্গ সমতার বিষয় নয়, শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির একটি মৌলিক বিষয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় সস্মৃক্ততা বাড়তি মূল্য বয়ে আনে এবং টেকসই শান্তিতে অবদান রাখে।
আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ অবদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রণী অবস্থানের প্রশংসা করেন। তারা নারী শান্তিরক্ষী বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ও প্রচেষ্টার ভূয়োসী প্রশংসা করেন এবং বৈশ্বিক শান্তির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের আশ্বাসকে স্বাগত জানান।
জাতিসংঘের শান্তি অভিযানের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এবং জাতিসংঘের ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি, পলিসি অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড রাজধানীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর অর্থ নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি।
শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি মূলত দেশের নারীদের মূল্যায়নের আরও একটি পন্থা। বাঙালি নারীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যাকে অতিক্রম করে জীবনধারণ করছে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে প্রশংসার। তবে শুধু উদ্যোগেই যেন তা আঁটকে না থাকে। যত দ্রুত সম্ভব নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এবং পরিকল্পনার উপর্যুপরি বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাক বীরদর্পে।