নারীর মুক্তির জন্য সুশিক্ষা জরুরি
আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারী এখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারক-বাহক। পুরুষ যা বলে বিচার-বিবেচনাহীনভাবে তা মেনে নেয়। শুধু মেনে নিয়ে ক্ষান্ত থাকেন, এমনটা নয় তারা তা লালন-পালন করেন। পুরুষের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে নারী সমাজ। যা থেকে আজও সম্পূর্ণরূপে নারীর মুক্তি মেলেনি! তারা নিজেদের জ্ঞান-দক্ষতা-যোগ্যতার বিকাশকে থমকে দিয়ে পুরুষের প্রেমের পূজারি হতে গিয়ে নিজের সবথেকে বেশি সর্বনাশ করে থাকেন।
আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সর্বদা নারীকে বশে রাখতে চায়। ঘরের ছোট্ট কন্যাশিশু থেকে শুরু করে স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মা কেউই বাদ যান না। পুরুষকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গার্জিয়ান মানেন। এবং পুরুষের ছায়াতল থেকে যে নারীর মুক্তি নেই এটাও নারীরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। ফলে নারীদের জীবনের জটিলতাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। যখনই সাংসারিক অশান্তি, দাম্পত্য সংকট দেখা দিচ্ছে তখন নারী মনেই করছেন পুরুষের ছায়াস্পর্শ ছাড়া তার বাঁচার মতো স্কোপ নেই। ফলে তিনি যতোই নির্যাতিত হোন না কেনো পুরুষের সঙ্গ ছাড়াতে নারাজ। কারণ এ সমাজে নারী থাকবে আর তার সঙ্গে একজন পুরুষের কর্তৃত্ব থাকবে না তা হতেই পারে না। ফলে নারীর সঙ্গে পুরুষের চিরন্তন সংযোগ। মারামারি, কাটিকাটি, মনোমালিন্য, মত-পথের অমিল সবার ঊর্ধ্বে তাই নারীর প্রতি প্রভু স্বরূপ পুরুষের উপস্থিতি।
পত্রিকার পাতা ওল্টাতেই মনটা বিষাদে ভরে যায়। এত হত্যা, গুম, খুন, সংকট। নারী পুরুষকে খুন করছে। পুরুষ নারীকে গলায় দঁড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখছে। নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। চারিদিকে এত অরাজকতা সৃষ্টির মূলে কী? একটু শান্তি-স্বস্তি পাওয়ার আশায় মানুষ নিজেকে প্রতিনিয়ত সময়ের সঙ্গে আপডেট করে। শত পরিশ্রম হলেও মানুষ ভাবে তার ঘরটা যেন শান্তিপূর্ণ হয়। সব গ্লানি-দুঃখ যেন পরিবার-পরিজনের কাছে শেয়ার করা যায়। কিন্তু ঘটছে ঠিক তার উল্টো। চর্তুদিকে এক অশনি সংকেত বিরাজমান। মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীলতা। মানুষের শরীরে যেন দানব ভর করেছে। তাইতো সব অশান্তিকে শান্তির স্পর্শ দিতে গিয়ে একে অপরের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠছে। এ থেকে পরিত্রাণ জরুরি। নতুবা এ ধরনের অবক্ষয় সমাজকে গিলে খাবে!
মানুষ তখনই সব অসহ্য সহ্য করে যখন তার অপশন না থাকে। বাঁচার মতো অপশন। অর্থাৎ আমরা জানি মনের শান্তি সবচেয়ে বড় শান্তি। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত কোনোকিছুই জীবনের শান্তি আনতে পারে না। তবে হ্যাঁ টাকা পয়সা থাকলে শান্তি আনার মতো অনেকগুলো খাত তৈরি হয়ে যায়।
যা অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তির থাকে না। আরও একটি বিষয় গভীরভাবে জড়িড। তা হচ্ছে সুশিক্ষা। জীবনবোধ। কেউ যদি জীবনের প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে বোধগম্য হয় তবে তিনি জীবনকে নিয়ে খেলতে পারবেন। কারণ আমরা জানি, জীবনের জার্নিটা সংগ্রামের। এ পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যিনি কোনপ্রকার সংগ্রাম ছাড়াই জীবনযাপন করছেন। একটু চক্ষু দুটো উন্মোচন করে দেখা প্রয়োজন, জীবন মানেই এক সংগ্রামের নাম। এই সংগ্রামে জয়ী হতে হলে তাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক।
নারীদের জন্য সুশিক্ষা জরুরি। যে শিক্ষায় জীবনবোধ জাগ্রত হবে৷ পরিবার-সংসার-জীবনের সমগ্র পাঠ অনুধাবন করা যাবে। জীবনের পথে চলতে হলে এর ব্যত্যয় নেই। নারী যদি পুরুষতন্ত্রের প্রভাব ছিন্ন করে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা-সুশিক্ষার দ্বারা নিজেকে আলোকিত করতে পারে তবে অনেক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ ঘটবে।