Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশে নারীশ্রমিক কমার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে

ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আশায় অনেকেই প্রবাসে পাড়ি জামান। সেই দলে নারী-পুরুষ উভয়ই আছে। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় থেকে বিনিয়োগে মন্দা চলছে। যা বৈদশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এজন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থানে লোকবল কমেছে।৷ বিশেষ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমেছে!

বিএমইটি বলছে, ১৯৯১ সাল থেকে নারীরা দেশের বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ৩১ বছরে দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৯২২ জন নারী। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন। ২০১৭ সালে এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী কাজ করতে গিয়েছেন।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৪৫৫ জন নারী কাজ করতে গিয়েছেন। এদিকে গত বছর এই পাঁচ মাসে গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৩৬৩ জন নারী। গত বছরের চেয়ে এ বছর ২৭.৬২ শতাংশ নারী কম গিয়েছেন। এ বছর বৈদেশিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ কম। কিন্তু এর নেপথ্য কারণ কী?

বিশেষত আমাদের দেশের নারী শ্রমিকদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, এসব দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ফলে নারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করা স্বাভাবিক।

বিএমইটির তথ্য বলছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গিয়েছেন। চলতি বছর সৌদি আরব গিয়েছেন ২৬ হাজার ১৬৯ জন, যা মূল সংখ্যার ৭১.৭৮ শতাংশ। এরপর গিয়েছেন ওমানে। ওখানে গিয়েছেন তিন হাজার ২২৭ জন, যা মূল সংখ্যার ৮.৮৫ শতাংশ। ওমানের পর জর্ডানের অবস্থান। জর্ডানে গিয়েছেন তিন হাজার ২০৮ জন, যা মূল সংখ্যার ৮.৮০ শতাংশ। জর্ডানের পরে রয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন এক হাজার ৭৪ জন নারী, যা মূল সংখ্যার ২.৯৫ শতাংশ।

বিএমইটির তথ্যে দেখা যায়, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬ জন নারী কর্মী গিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে ৭০ হাজার ২৭৯ জন, ওমানে ১৬ হাজার ৫৪৪ জন ও জর্ডানে ১১ হাজার ৮৭৯ জন নারী কর্মী গিয়েছেন।

মধ্যেপ্রাচ্যে বিভিন্ন সময় নারী নির্যাতনের কথা শোনা যায়। এমনকি আত্মহত্যার কথাও শোনা যায়। গত বছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে ৭১৪ জন নারীর লাশ এসেছে। এছাড়া গত ৭ বছরে ২৭০ জন নারী মধ্যেপ্রাচ্যে আত্মহত্যা করেছেন। সম্প্রতি সৌদি থেকে ১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।

এপিবিএনের ভাষ্য মতে, সৌদি আরব যাওয়ার পরপরই এই নারী কর্মীদের মোবাইল ফোনসেট কেড়ে নেওয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। দিনে দুইবারও ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। চাবুক দিয়ে প্রহার করা হতো তাঁদের। গৃহকর্তা স্বামী ও স্ত্রী দুজনে মিলেই মারধর করতেন। বোতল দিয়ে আঘাতও করা হতো। এমন পরিস্থিতিতে বৈদশিক কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণ কমছে। যা দেশের রেমিট্যান্স খাতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

দেশীয় আইন ও নীতিমালা মেনে প্রবাসে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অবৈধ পাসপোর্ট বাতিল ও মামলার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। দালালের মাধ্যমে কেউ যেন ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেলক্ষ্য আইন ও প্রসাশনের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এখন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির যুগ। ফলে সচেতনতা বাড়াতে ছোট ছোট নাটিকা বানিয়ে জনস্বার্থে প্রচার-প্রচারণা চালানো যেতে পারে। দেশে কর্মসংস্থানের অপ্রতুল সুযোগ থাকায় বাইরে পাড়ি জমালেও সেক্ষেত্রে বৈধ পথ অবলম্বন করা প্রয়োজন। কিছু টাকা কম, বাড়তি সুবিধা নানাবিধ মুখরোচক প্ররোচনায় না পড়ে দেশীয় নীতি মেনে প্রবাসে পাড়ি জমাতে হবে। নতুবা দায়বদ্ধতার জায়গা থাকবে না। বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে এত এত নারী নিপীড়নের পিছনে এটাও বিশেষ কারণ। অন্যদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গিয়ে নারীরা যেন নতুবভাবে বিড়ম্বনার শিকার না হন সেদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কড়া নজরদারি রাখতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ