৯ বছরের শিশু ধর্ষণ: শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক
ধর্ষণ এখন নিত্য-নৈমত্তিক ঘটনা। পরিণত বয়সের নারী, বৃদ্ধা থেকে শুরু করে চার-পাঁচ বছরের শিশুও বাদ যাচ্ছে না ধর্ষকের শিকার থেকে। ধর্ষণ হচ্ছে ঘরে-অফিসে-পথেও। এমনকি আজকাল স্কুল-মাদ্রাসাও শিশুরা আর নিরাপদ নয়। সম্প্রতি মাগুরার মহম্মদপুরে টাকা দেখিয়ে ৯ বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ষাট বছরের বৃদ্ধ বীরেন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রোববার দুপুরে উপজেলার বাবুখালি ইউনিয়নের চরসেলামতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিষয়টি নতুন করে আবারও সবার সামনে এসেছে।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, রোববার দুপুরে স্কুল ছুটি হলে ওই ছাত্রী বাড়িতে ফিরছিল। সে একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। রাস্তায় অভিযুক্তের সঙ্গে দেখা হলে তিনি টাকা দেওয়ার নাম করে ছাত্রীকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান৷ এরপর ধর্ষণ করেন।
এমন ঘটনায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং শিশুটির পিতা বাদী হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আসামি করে মোহম্মদপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। বর্তমানে শিশুরা কোথাও নিরাপদ নয়। সে কন্যাশিশু হোক বা ছেলে শিশু। তবে মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে! কোথাও যদি সন্তান নিরাপদ না থাকে, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
ধর্ষণ এখন ‘মহামারী’ আকারে ছড়িয়ে পড়ায় বাসা-কর্মস্থল-ফুটপাত, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন; সর্বত্র একই চিত্র। ধর্ষণের জন্য পুরুষতন্ত্র প্রতিনিয়ত ওঁৎ পেতে থাকে। এই ওঁৎ পেতে থাকাদের হাতে প্রথম সুযোগ আসে শিশু-নারীর অসহায়ত্ব-দারিদ্র্য। একশ্রেণির নীচু মানসিকতাসম্পন্ন পুরুষ নারীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাকে নানাভাবে জিম্মি করে। অনেক নারী পুরুষতন্ত্রের ছড়ানো ‘জাল’ ছিঁড়তে না পেরে ফাঁদে পা দিতেও বাধ্য হচ্ছে। তবে শিশু ধর্ষণ দিন দিন বাড়তেই আছে। এ বিষয়ে কারো কোনো সজাগ দৃষ্টি নেই! রাষ্ট্রের কঠোর উদ্যোগ নেই!
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা যদি এভাবে হুমকির মুখে পড়ে তবে জাতির জন্য তা কলঙ্ক। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে। কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের ছোট ছোট সোনামনিরা নিরাপদ নয়। এক ধরনের অশুভ ছায়া তাদের ঘিরে রেখেছে। ঘরে-বাইরে তাদের এমন অনিরাপদ পরিস্থিতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বর্তমানে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে। কিন্তু শিশু ধর্ষণকে রুখতে হলে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন তার কোনটাই তেমন লক্ষণীয় নয়৷ এর ফলে অপরাধীরা আরও পার পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধ করে ছাড় পাওয়ার মনোভাবই তাদের এ কাজে আরও উদ্যোত করছে। পিতা-মাতার সজাগ দৃষ্টির পাশাপাশি রাষ্ট্রের কঠোর উদ্যোগ জরুরি।
শিশুকে গুডটাচ-ব্যাড টাচ সম্পর্কে জানাতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা, গিফট নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের যদি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ না করা যায় তবে তারা কুচক্রীর ফাঁদে পা দিতে পারে! সর্বোপরি শিশু ধর্ষণ কমাতে সেমিনার, সভা, পথ নাটক, স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন করা এবং রাষ্ট্রীয় কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। গণপরিবহনে শিশু-নারীদের বরাদ্দকৃত ছিট নিশ্চিতকরণ। তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও কন্যা শিশুরা এ থেকে পরিত্রাণ পাবে। নতুবা জাতি আলোর পথ দেখতে সক্ষম হবে না।