কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: হোক কঠোর শাস্তি
আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই নারীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছে। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রে আজও নারীরা নিরাপদ নয়। ঘরে এবং ঘরের বাইরে নারী সমানভাবে অনিরাপদ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে এতটাই ভোগ্যপণ্য মনে করা হয় যে, নারীর প্রতি অধিকাংশের প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা নেই।
নারী তিনি মা হোন বা বোন কিংবা মেয়ে তাকে প্রতিনিয়তই একটি অপ্রীতিকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। মেনে নিয়ে এবং মানিয়ে নিয়েই জীবনযাপন করতে হয়। তবু নারীর প্রতি সমাজের নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপিত হয় যা একজন পুরুষের ক্ষেত্রে কখনোই প্রযোজ্য নয়। তবে নারী শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সর্বদা। কিন্তু এ সমাজ নারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তাদের নিয়ম-নীতির বেজাজালে! যা কিনা শুধু নারীর জন্যই তৈরি! এজন্য এসব থেকে নারীর পরিত্রাণ পাওয়াও মুশকিল। কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে শোষণের উদ্দেশেই এগুলো আরোপ করে। আর সব বাধাকে অতিক্রম করলেও জীবনে এমন কিছু ঘটনাকে কখনও নারী অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে না যা তার সম্ভ্রম হানি করে। কারণ নারীরা সবকিছুর সঙ্গে লড়তে পারলেও সম্ভ্রমের প্রতি নারীর সবকিছু দাঁড়িয়ে থাকে। এই নিয়মনীতিও ফেঁদেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ!
দিনের পর দিন ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। এ থেকেই বোঝা যায় সমাজের ঘুণে ধরা চিত্র। সমাজের অবক্ষয় আর কত হলে এ সমাজ ঘুরে দাঁড়াবে? এ সমাজের অধিকাংশ মানুষের ব্যক্তিত্বহীন জীবনের কথায় প্রমাণ করে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পশুর চেয়ে যখন মানুষ বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই সমাজের মাঝে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বারংবার ঘটে। আমাদের সমাজ আজ ঘুণেধরা। এখানে মানবিকবোধ, বিবেকবুদ্ধি সবই আজ তলানিতে ঠেকেছে! নারীর প্রতি সম্মানের লেশমাত্র এ সমাজে আজ নেই। অতি আধুনিক হতে গিয়ে আমরা আমাদের সভ্যতার জায়গা থেকেও খসে পড়ছি দিন দিন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে এক কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রীপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোমবার সকালে শ্রেণি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাড়ি থেকে বের হন। ওইদিন বিকাল ৩টার দিকে বাড়ি না ফেরায় তার ফোনে কল করে পাওয়া যায়নি। বিকাল ৪টার পর তার ফোন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। ওই ব্যক্তি জানান, মেয়েটিকে গোসিঙ্গা-রাজাবাড়ী সড়কের কুটুমবাড়ী রিসোর্টের সামনে থেকে কয়েকজন যুবক ইজিবাইকে তুলে দিয়েছে। পরে শ্রীপুরের কাপাসিয়া সড়কের পটকা এলাকা থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে জ্ঞান ফিরলে তিনি সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো. নাসিম জানান, এ ঘটনায় ফারদিন হাসান স্বাধীন (১৭) নামে এক কিশোরকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিতব্য তথ্য অনুযায়ী এটা নিশ্চিত যে, কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
তার কারণও কিছুটা উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছোট ভাইয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে অভিযুক্ত স্বাধীন তার সঙ্গে দুই দিন আগে কথা বলে। সোমবার (৫ জুন) কলেজ থেকে বের হলে স্বাধীন তাকে দেখে ডাব খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এক পর্যায়ে স্বাধীন তাকে জোর করে ডাব খাওয়ায়। ওই ডাব খাওয়ার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ পর্যায়ে স্বাধীনের পূর্ব পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে ঘটনা যেভাবেই ঘটুক না কেনো, কলেজছাত্রী চরম সর্বনাশের শিকার হয়েছে। এ সমাজ এমনিতেই মেয়েদের সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টি পোষণ করে তারওপর নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা কখনও কাঙ্ক্ষিত নয়।
যেহেতু এখন সময়টা খুবই খারাপ। চারিদিকে হায়েনারা ওঁৎ পেতে বসে আছে সেহেতু নারীকে আরও সচেতন হতে হবে। হ্যাঁ নারীকেই সচেতন হতে হবে। কথা থাকতেই পারে নারী কেনো সচেতন হবে, তারা তো কোন সমস্যা সৃষ্টি করছে না বরং পড়ছে। ঠিক এই কারণেই নারীকে সচেতন হতে হবে।
পরিচিত বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকেই প্রথমাবস্থায় বিশ্বাস না করা শতভাগ উত্তম। আর পুরুষদের তো নয়ই৷ একমাত্র বাবা-ভাই- মাকে ভরসা করা ছাড়া বাইরের কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন, কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা। যুগ যেমন নারীকে ঠিক ততটাই কঠোর হতে হবে। সময়ই এমন হতে শিক্ষা দিচ্ছে নারীকে। কারণ আইন, আদালত থেকে কতটা পেতে পারে একজন নারী। সবচে বড় কথা কিছু হারালে তা ভুক্তভোগীর হারিয়ে যাবে। ফলে এই হারানোকে রোধ করতে হলেও নারীকেই সচেতন হতে হবে।
কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযুক্তকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এবং তার অপরাধের তথ্য-প্রমাণসহ তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হোক। দৃষ্টিমূলক শাস্তি দিয়ে এ ধরনের অপরাধ যাতে আর কেউ দ্বিতীয় বার করার সুযোগ না পায় সেই ব্যবস্থা করা হোক। একমাত্র প্রশাসনই এখন এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারে। নারীরা এত সংকোচ- সংকটে আর কতদিন নিজেদের রাখবে? রাষ্ট্রের উচিত নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।