Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী আর কতকাল পণ্য!

নারীকে পণ্য ভাবা এ সমাজে মজ্জাগত। স্বভাবে ও চিন্তা-চেতনা এবং কার্যকলাপে এ সমাজ বুঝিয়ে দেয় নারী পণ্য। আর নারীকে পুরুষ আশ্রয় দেয় সঙ্গী হিসেবে নয় দাতা হিসেবে। পুরুষ তখনই নারীর সঙ্গী ঠিক যতক্ষণ নারী তার সবটা উজাড় করতে পারবে। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী কেবলই পণ্য। তা নতুন করে আর প্রমাণের প্রয়োজন নেই কারণ এর বাইরে আজ অবধি সমাজের কিয়দংশ পুরুষ ভাবতে পেরেছে কিনা তা সত্যি প্রশ্নবিদ্ধ। হয়তো গণনা করলে সেটা শূন্যের কোঠায় ঠেকবে! যা নিতান্তই হাস্যকর হলেও সমাজ সত্য এবং চিরন্তন আজবধি।

আজকের যুগে এসেও নারীর মূল্যায়ন তার সৌন্দর্য, টাকা-পয়সা, শানশওকতের ভিত্তিতে। নারীর মন সেখানে মূল্যহীন। নারী শুধু সেবাদাসী হয়ে জীবন কাটায়। কিন্তু তার এই সেবাদাসত্ব গ্রহণ করতে হলেও তাকে কড়াই গণ্ডাই যৌতুকের টাকা গুণে স্বামীর ঘরে অনুপ্রবেশ করতে হয়। বিয়ের পর স্বামী হন প্রভু আর স্ত্রী হন দাসী। সমাজের এই অতি হাস্যকর কর্মযজ্ঞের প্রণেতা পুরুষতন্ত্র। তারা নারীকে পুঁজি করে নিজেদের সম্মান, টাকাকড়ি, জায়গা জমি সব বাড়াতে চায়। তাইতো বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের বাপের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে প্রচুর আত্মগরিমার পরিচয় দিতে থাকেন। আর একশ্রেণির বোকা-নির্বোধ কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা তার মেয়েকে সৎ পাত্র গছিয়ে দিতে গিয়ে ফাঁদে পড়ছেন লোভী, অংহকারী পাত্রের হাতে। তবু কন্যা সন্তানের দায় থেকে মুক্তি পেতে নিজের সর্বস্ব লুটিয়ে তার পায়ে আশ্রয় নেয়। আর এই আশ্রয় নারীর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। নারী আর ঘুরে তাকাবার সুযোগ পায় না। তাকে সে সুযোগ দেওয়া হয় না।

আজকালকার শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, সুদর্শন-কুদর্শন, জাত-অজাত যে শ্রেণিরই হোক না কেনো তাদের ডিমান্ড লাখ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি বিস্ময় জাগে যখন একজন শিক্ষিত ছেলে লালসার জেরে পাত্রী দেখতে গিয়ে টাকার দাবি করে বসেন। এবং এমনভাবে সেটাকে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার সম্মুখে উপস্থাপন করেন যেন, আগে থেকে কোনো টাকা ওই পরিবারে তিনি গচ্ছিত রেখেছেন। এ সমাজ যতটা সভ্য, আধুনিক, ডিজিটাল তকমাধারী হচ্ছে তত ভেতরের কদর্য, নোংরামি রূপ প্রকট হচ্ছে। ওপরের মুখেশ খসে পড়তেই এক একজনের বিভৎস চেহরা দেখে শিহরিত হতে হয়।

এমন একটা সময় আমরা যাপন করছি যে সময়টাতে মানুষের মধ্যে বিবেক, মনুষ্যত্ব, মানবিকতার লেশমাত্র নেই। সবার মধ্যে এক অসভ্য দাম্ভিকতা। চিন্তা-ভাবনা এবং চেতনায় নোংরামি- গোঁড়ামি- গোঁয়ার্তুমি৷ কোন সমাজকে আমরা সমানের দিনে প্রস্তত করতে চলেছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য!

এ সমাজের প্রত্যেকটা দরজা বন্ধ। কড়াঘাত করলে তা ওই ব্যক্তির বুকে এসেই পুঃন আঘাত করে। কারণ সবার মধ্যে অনন্য হওয়া সহজ নয়। মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, নোংরামি, তেলবাজি, দাম্ভিকতা এতটা প্রগাঢ় হয়েছে মানুষকে মানুষ নয় পশুর চেয়ে অধম গণ্য করা হচ্ছে। তারওপর নারী! এই নারী জাতি প্রাচীনকাল থেকে পুরুষের হাতের পুতুল ছিল। আজও আছে। যতোই ঢাক পিটিয়ে বলতে চেষ্টা করা হোক না কেনো, কোথাও একটা অদৃশ্য জালে বন্দি এ সমাজ, পরিবার। নারী তার হাতের পুতুল। শিক্ষায় যেখানে মনের কলুষতা দূর হওয়া বাঞ্ছনীয় সেখানে শিক্ষিত জন্তুরা আরও হিংস্র! তারা কিঞ্চিৎ সাফল্য পেলে নিজেদের হনু মনে করেন! স্ত্রীর প্রতি সম্মান না দেখিয়ে লালসা দিয়ে তাকে কামনা করেন। তা রূপের লালসা, টাকা-জমির লালসা!

জন্তুদের থেকে রক্ষা পেতে হলে নারীকে জন্তুর ভাষা বুঝতে হবে। সেই জন্তুর ভাষাকে নিজ বশে আনতে হলে নারীকে তার যোগ্যতা দিয়েই তাকে গ্রহণ করতে হবে। তাই বলে সেই যোগ্যতা যেন যৌতুক না হয়। যৌতুকের মতো জঘন্য পাপকে কোনো নারী এবং তার পরিবার যেন প্রশ্রয় না দেন। সরব হতে হবে এই অন্যায়কে রুখতে হলে।

এমন সামাজিকতার কী দাম যেখানে নারীকে পণ্যে রূপ দেওয়া হয়? এমন বিয়ের কী দাম যেখানে সম্মানটাই নারীর নেই! ভালোবাসার পরিবর্তে আজীবন গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে! যে বা যারা এসব প্রচলনে বিশ্বাসী সেই পুরুষতন্ত্রের বুকে পদাঘাত করতে হবে নারীকেই। কোনো মূল্যমানে নারী বিকোবে না। নারীকে শ্রদ্ধায়-সম্মানে আলিঙ্গন করতে পারলে তবেই নারী জীবনের পথে হাঁটবে। নতুবা পরিবার, সমাজের জঘন্য নিয়মে নিজেকে বিলিয়ে না দেবো না বিবেকসম্পন্ন নারী।

নারীর আপন মূল্য নারীর নিজ কর্মে। নিজের জীবনকে আলোকিত করতে হবে। শ্রদ্ধা- সম্মানের যোগ্য করে তুলতে হবে। নারী কোনো পণ্য নয়। যে তাকে চায়লেই অবমূল্যায়িত করা যাবে! ডিমাণ্ড নামক নতুন নামকরণে যৌতুকের বোঝা চাপিয়ে নারীকে পিষ্ট করা হবে!

নারী আগে মানুষ। তার নিজের জীবন নিজের। সমাজ নামক অমানবিক কর্মযজ্ঞে নারী নিজেকে বিসর্জন না দিক। নারী তার মূল্য বুঝতে সক্ষম হোক। কোনো নারীই যদি তাকে পণ্য করে না তোলে তবে একদিন না একদিন অবশ্যই সমাজ থেকে এসব গোঁড়ামি বিদায় হবে। আসুন নারীকে মূল্যায়ন করি তার যোগ্যতায়-মেধায়। শিক্ষিতের নামে যেসব অসভ্যরা হবু স্ত্রী বা কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার কাছে টাকা ধার্য করে সেসব অমানবিক, কুলাঙ্গারদের শুভোদয় হোক। সমাজ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হলে নারীকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
Write to জান্নাতুল যূথী

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ