শিরীন শিলাকে চুমোর ভিডিও ভাইরাল: বিকৃত রুচি সম্পর্কে দুটি কথা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন একটি ভিডিও বারবার আসছে। প্রকাশ্যে একজন অভিনেত্রীকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেয়েছেন একজন ভক্ত। এই বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই দোষারোপ করছেন ওই অভিনেত্রীকে। ঘটনাটি শুরু থেকে বলা যাক। একটি সিনেমার শুটিং স্পটে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন এক ভক্ত। অভিনেত্রীও স্বাভাবিকভাবে তার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ওই ভক্ত তাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ করে অভিনেত্রীর গালে চুমু খেয়ে বসে। এতে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন অভিনেত্রী।
তারকাদের নিয়ে ভক্তদের মাঝে কাজ করে অনেক উন্মাদনা। প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার ও একটু কথা বলার ইচ্ছা অনেকেই পোষণ করে। কিন্তু ভক্তদের মাত্রাতিরিক্ত জিনিসগুলো তারকাদের জন্যও বিব্রতকর। বিনোদন জগতের তারকারাও মানুষ। সিনেমার পর্দায় আমরা যাদের দেখি, তারা বাস্তব জীবনে অন্য একটা মানুষ। তাদের পরিবার আছে, তারা সাধারণ মানুষের থেকে সম্মান চায়, ভালোবাসা চায়। সিনেমা আমাদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। অভিনেতা অভিনেত্রীরা তাদের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে জয় করেন সাধারণ মানুষের মন। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্যই তারকারা মাঝে মাঝে হয়ে যান হাসির পাত্র।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনেত্রীর এই ঘটনা ঝড়ের বেগে ছড়িয়েছে। এবং বরাবরের মতোই আমাদের সুশীল সমাজ দোষ দিচ্ছে সেই অভিনেত্রীকে। তাদের ভাষ্যমতে, ওই অভিনেত্রী যদি কাছে টেনে না নিতেন, তাহলে তো ওই যুবক এরকম করতে পারতেন না। কিন্তু, যদি ওই অভিনেত্রী যুবকটিকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিতেন, তাহলে এই সুশীল সমাজই তখন তাকে অহংকারী আখ্যা দিতো। সমাজ তখনো ওই যুবকটির পক্ষে কথা বলতো। আদতে এই ছোট ছোট অপরাধে ওদের সঙ্গ দিয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না তো? এরাই বড় হয়ে অন্যান্য বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে না তো?
আজ যেই কিশোর অভিনেত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ করেছে আর সমাজ তাকে বাহবা দিচ্ছে, এই কিশোরের মনে এটাই আসেনি তো যে, ও যা করেছে তাতে কোনো ভুল নেই? এই সুশীল সমাজ ছেলেদের দোষ খুঁজে পায় না। যত ঘটনা ঘটুক দোষ এসে পড়বে একজন নারীর ঘাড়ে। আজকে যাদের ছোট ছোট ভুলে সমাজ সঙ্গ দিচ্ছে, তারাই ভবিষ্যতে ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট কাজ করার সাহস পাবে। তারাই প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-কর্মক্ষেত্রে যাওয়া নারীদের হেনস্তা করবে। হয়তো এই সুশীল সমাজের কারও বোন, কারও স্ত্রী হবে ভিক্টিম।
‘প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি, ক্ষুদ্র অপরাধ/ক্রমে টানে পাপ পথে ঘটায় প্রমাদ’- এই দুটো লাইন হয়তো সবাই পড়েছেন। ছোট পাপই একসময় বড় পাপ করার সাহস জোগায়। তাই, সমাজকে সুন্দর রাখতে, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব ভুলের সমাধান এখনই করা উচিত। গোড়া থেকে নির্মূল করা উচিত এসব আগাছা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে চাইলে এখন থেকেই সোচ্চার হতে হবে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নারীদের অসম্মান করা প্রতিটি মানুষের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। তাহলেই কেবল গড়ে উঠবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি স্থান।