Skip to content

২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্রীদের নিত্যসঙ্গী বাইসাইকেল: জাগো নারী জাগো

কয়েকবছরের মধ্যে সমাজে নারীদের নিয়ে যে-সব ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম বাহন হিসেবে সাইকেলের ব্যবহার। উল্লেখ্য, মাত্র কয়েকবছর আগেও মেয়েরা সাইকেলের ব্যবহার থেকে বেশ দূরে ছিল। সচরাচর মেয়েদের সাইকেল ব্যবহারে দেখেই যেতো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে মেয়েরা যে নিজেদের সম্পর্কে একটু সচেতন হতে শিখেছে, চিন্তা-ভাবনা করতে শিখেছে তা বোঝা যাচ্ছে। নিত্যদিনের চলার পথের সঙ্গী সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে যুগ পাল্টেছে। এই ইতিবাচক পরিবর্তন মেয়েদের জীবনকে অনেকটা ট্রেসমুক্ত করতেও সহায়ক। সমাজের সব বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে মেয়েদের এ ধরনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ সাধুবাদের যোগ্য।

ধীরে ধীরে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। তবে হ্যাঁ, পরিবর্তন ইতি-নেতি উভয়ই হতে পারে। মূলত আমাদের সমাজের মতো যুক্তি-বুদ্ধিহীন সমাজে তাই যেন স্বাভাবিক। সত্যি বলতে, এ সমাজের অধিকাংশ মানুষই গোঁড়ামি, কুসংস্কার আর মৌলবাদিতায় আচ্ছন্ন। এতটাই প্রথাবদ্ধ যে, যুগের চাহিদা যতই থাক, বিবেকবুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা এবং যুক্তির মাধ্যমে সামনের দিকে না এগিয়ে পশ্চাৎগামী হতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তারা! সময়ের সঙ্গে জীবনবোধ, চিন্তা ধারারও যে নবায়ন জরুরি তা স্বীকার করতে নারাজ আমাদের পরিবার- সমাজ। ফলে আজ থেকে হাজার বছর আগেও নারীদের যে জীবনপ্রণালি ছিল তাই চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত থাকতে চায় উগ্র মানসিকতাসম্পন্ন শ্রেণী। নিজেরা যতোই আপডেটেড হোন না কেন, নারীর জন্য রয়েছে বস্তাপচা সংস্কার। যা পালনে নারীকে বাধ্য করা হয়।

তবু এ সমাজের মধ্যে থেকে মেয়েরা যে এ ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং আশা জাগানিয়া। মেয়েদের চলার পথের সঙ্গী এখন সাইকেল। দূর-দুরান্ত থেকে স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর অন্যতম বাহন হয়ে উঠেছে এই সাইকেল। এর ফলে মেয়েদের ভোগান্তি অনেক কমেছে। এর মতো ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মেয়েরা এগিয়ে যাক তার লক্ষ্যে।

ছাত্রীদের যোগাযোগের এই সহজ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে তারা বিভিন্ন হেনস্তা থেকেও রক্ষা পাচ্ছে। গণপরিবহন ব্যবহারের ফলে দেখা যায় অধিকাংশ সময় মেয়েরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। গ্রাম-শহরাঞ্চলে গণপরিবহণগুলো এত যাত্রী পরিবহন করে থাকে যেন ছাত্রীরা অস্বস্তিবোধও করেন। এসব নানাবিধ সমস্যাকে নিমিষে এড়িয়ে চলতে নারীদের সাইকেল ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত ও বিবেকসম্পন্ন পদক্ষেপ। এ ধরনের প্রগতিশীল চেতনাকে যারা লালন করে পথ চলতে শুরু করেছে সেই নারীরাই একসময় সমাজের বদ্ধমূল ধারণার আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এই পরিবর্তন বিশেষভাবে নজর কাড়ছে সুশীল সমাজের। গোঁড়ামি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছাত্রীরা যুগের চাহিদায় সাড়া দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা-ই এখন বাহন হিসেবে বাইসাইকেল ব্যবহার করছেন। শুধু যে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে এমন নয়, এটি একটি যুগের বিপ্লব। মানসিক দৈন্যের ইতি।

আমাদের সমাজের নারীরা একদিন এভাবেই একে একে সব বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। আপন বিশ্ব আপনার তাগিদে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। যুগের চাহিদায় নিজেদের ভুলচুক শুধরে নিয়ে সামনে চলবে এভাবেই। নারীদের এমন পদযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আশার বাণীতে নয় কাজে বিশ্বাসী হোক মেয়েরা। যদি একজোট হয়ে ভালোর পথে, আলোর পথে এগুতে থাকে, তবে বিশ্বে নারীরা অবশ্যই দীনতা মুছে ফেলতে সক্ষম হবে। শুধু পথের ভোগান্তি দূর করায় নয় নারীর সুরক্ষায় বাইসাইকেল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সময় এসেছে পরিবর্তনের। এই ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে উঠুক নারী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ