Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে সম্মান দাও, মতকে গুরুত্ব দাও

আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য চিরন্তন। আজ অবধি নারীকে শুধু ভোগ্যপণ্য গণ্য করা হয়। নারীরা যে মানুষ সে স্বৃকীতি যেন এ সমাজ দিতে ভীত! ফলে নারীর অভিমতকেও তারা ভয় পায়। নারীকে নিজের মতো বাঁচতে দিতে চায় না। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে নিত্য-নতুন ফাঁদে বন্দি করা হয়! নারী হয়ে ওঠে পরাধীন। কিন্তু নারী ও পুরুষের হওয়ার কথা একে অন্যের সঙ্গী। পাশাপাশি চলতে গিয়ে পুরুষ নারীর সহোযোগী হয়ে উঠবে, এটাই কাম্য! কিন্তু সমাজে এর ব্যত্যয় ঘটছে। নারী হচ্ছে দাসী। আর পুরুষ তার অধিকর্তা! ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মত-পথের গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নও উঠছে না!

আমাদের পরিবার ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ করলে সহজেই অনুমেয় যে, নারী কী প্রচণ্ড পরিমাণে শোষিত! পিতৃগৃহে একজন মেয়ে তার ইচ্ছে মতো চলাচল করতে সক্ষম নয়। তাকে মেরুদণ্ডহীন কেঁচো করে রাখা হয়। যাতে স্বামী – শ্বশুরের ঘরে গিয়েও নারীটি হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাতে সক্ষম হয়! এর মাধ্যমে আমাদের সমাজে আজও নারীরা নিজের জীবনটা যে কী সেটাই বুঝে উঠতে সক্ষম হয় না! বলা ভালো তাকে বুঝতে দেওয়া হয় না। অনেকটা বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ নাটকের রাজপুত্রের মতো। তাকে বনের বাইরে যে তার পিতাসম ঋষি বাদে আর কোনো জনমানব আছে, এটাই বুঝতে দেওয়া হয় না!

নারীরাও আমাদের সমাজে ঠিক তাই। তাকে যতটা পারা যায় বস্তাবন্দি করে তার ওপর হাজার মণ ওজনের পাথর বসিয়ে রাখা হয়। সেই পাথর ভেদ করে তার আর্তনাদ সমাজের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না! আর নারী মরে আপন অন্ধকারে! এ সমাজ- পরিবার নারীর জীবনকে করে তুলছে দাসত্বের ট্রেনিং দিয়ে। যাতে এর বাইরে নারী আর কিচ্ছু কল্পনাও করতে না পারে।

আর অভিমত! মেয়ে হয়ে জন্মালে তার আবার মত কিসের? আজ অবধি এমন কথা শুনতে হয় না বা জানেন না এমন নারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে! অর্থাৎ কন্যা সন্তান আজন্ম পরাধীন। পরগাছা। তাকে উপড়ে ফেলতে যেমন সময় লাগে না। তেমনই প্রয়োজনে শোষণ করতেও বাধে না পুরুষতান্ত্রিক সমাজের!

আমাদের পরিবার ব্যবস্থায় যতদিন নারীর যোগ্য প্রাপ্তির মূল্যায়ন করা না হবে ততদিন নারীরা ডুকরে ডুকরে মরবে। কোথাও সম্মান- শ্রদ্ধা অরকজন করতে সক্ষম হবে না। কারণ পরিবারে পিতা-মাতা-ভাই-বোনদের মধ্যেই যদি বৈষম্য থাকে, অপ্রাপ্তি থাকে তাহলে নিষ্ঠুর পৃথিবী কত ভালো আচরণ ফিরিয়ে দিতে পারে! নারীর প্রতি দায় এ সমাজেরও রয়েছে। কারণ এ সমাজকে আজ অবধি কঠিন মায়া- মমতায় বেঁধে রেখেছে নারী। একটু ভাবলেই অনুমান করা যাবে, যে পরিবারের মাঝে ভালোবাসা- সম্মান- শ্রদ্ধা সে পরিবার টিকে থাকে না। আর পরিবারগুলো ধ্বংস হলে বা ভেঙে গেলে সমাজের অস্তিত্ব রক্ষা করা দায় হয়ে পড়বে! ফলে নারীই এ সমাজের অন্যতম কর্ণধার! যাদের প্রতি এ সমাজেড এত আক্রোশ!

পরিবার- সমাজে নারীর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি নারীর অভিমতকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা গড়ে না ওঠে, তবে সমাজ থেকে অন্যায়-অপরাধ দূর করা সম্ভব হবে না।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ