সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল আর নেই
দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন আরলিঙ্কস গ্রুপের ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ। রোকিয়া আফজাল রহমানএ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রোকিয়া আফজাল রহমানের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বিশেষ করে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন থেকেই সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এক মাস আগে রোকিয়া আফজাল রহমান দেশে আসেন। কিন্তু গতকাল তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে আবার সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই স্থানীয় সময় রাত দুইটায় ঘুমের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।
তার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৪ সেপ্টম্বর কলকাতায়। বাবা ব্যারিস্টার খোন্দকার আলী আফজাল ছিলেন বঙ্গীয় আইন পরিষদ বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সচিব, মা সাদিয়া আফজাল ছিলেন শিক্ষানুরাগী ছিলেন। রোকেয়া আফজাল রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার লরেটো কনভেন্ট স্কুলে। পরে করাচির সেন্ট জেভিয়ার্স কনভেন্ট কলেজ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কলকাতা ও করাচিতে লেখাপড়া শেষ করে রোকিয়ার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬২ সালে করাচিতে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে। দুই বছরের মধ্যে তিনি ব্যাংকটির তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাখার ব্যবস্থাপক হন। দেশে এই প্রথম কোনো নারীর ব্যাংক ম্যানেজার হওয়ার ঘটনা ঘটে,আর আলোচনায় আসেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রোকিয়া আফজাল রহমান স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালে মহিলা উদ্যোক্তা সমিতি বা উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। ২০০৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ মহিলা উদ্যোক্তা ফেডারেশন বা বিএফডব্লিউই; সারাদেশে যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।
দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তাদের একজন রোকিয়া আফজাল রহমান ১৯৮০ সালে নিজেই কৃষিভিত্তিক ব্যবসা শুরু করেন, গড়ে তোলেন আরআর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড। পরে আরলিংকস লিমিটেডেও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। মুন্সিগঞ্জে তার কৃষিভিত্তিক উদ্যোগে ১৫ হাজার কৃষককে যুক্ত করে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের মাধ্যমে তিনি বিনা বন্ধকিতে নারীদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারীদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য ‘মিনি মার্ট’ নামের বিশেষ শপ, উইমেন টু উইমেন সাপোর্ট প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার যাত্রা রোকিয়া আফজাল রহমান শুরু করেন। উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নারীদের কল্যাণে কাজ করে গেছেন আজীবন।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এশিয়ান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারপারসন রোকিয়া আফজাল রহমান টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিজের কর্ম ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতিস্বরূপ রোকেয়া আফজাল রহমান দেশে-বিদেশে বহু পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্যে লিডিং উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড, মন্টে কার্লো ১৯৯৯, আমেরিকান চেম্বারের বিসনেস পার্সন অব দি ইয়ার ২০০৩ ইত্যাদি অন্যতম।
২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে মহিলা ও শিশু, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সমাজ কল্যাণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন রোকিয়া আফজাল রহমান। মৃত্যুর আগে তিনি মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও মাইডাস ফাইন্যান্সের চেয়ারপারসন ছিলেন। তিনি ডেইলি স্টারের মূল কোম্পানি মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন এবং প্রথম আলোর মূল কোম্পানি মিডিয়া স্টারের পরিচালক ছিলেন।
এবিসি রেডিওরও পরিচালক ছিলেন। রোকিয়া আফজাল রহমান দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যুতে বিভিন্ন প্রতিস্থান গভীর শোক প্রকাশ করেন, টিআইবি,মহিলা পরিষদ