Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়ে ও পুরুষের আক্রোশ!

নারীর প্রতি পুরুষের বিদ্বেষ নতুন নয়। তবে কিছু কিছু ঘটনা এতটা ভয়বহতা সৃষ্টি করে যে, সমাজে তা আলোড়ন তোলে। নারী-পুরুষের মধ্যেকার সম্মান- শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় টিকে থাকে তাদের যুগল সম্পর্ক। তবে সেই সম্পর্কে যেকোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিড় ধরতে পারে। একজন অন্যজনের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে। ঘটতে পারে বিচ্ছেদ। কিন্তু সেই বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে যখন সাবেক প্রেমিকের আক্রোশের শিকার হতে হয় নারীকে তখন তা বিবেকের প্রশ্ন তোলে। একইসঙ্গে জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে এসব অমানবিক ঘটনা। আর যা একজন নারীর জন্য অসম্মান-অশ্রদ্ধার।

গত ৩ তারিখ ভারতের ছত্তিশগড়ের কবিরধাম জেলায় সাবেক প্রেমিকার বিয়েকে কেন্দ্র করে পুরুষের আক্রমণাত্মক আক্রোশের শিকার হয়েছে বিয়েতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ। সাবেক প্রেমিকার বিয়েতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বিস্ফোরক বসিয়ে হোম থিয়েটার উপহার দেয় এই প্রেমিক। বিদ্যুতের সংযোগ দিতেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় বর ও তার ভাইয়ের। এছাড়া গুরুতর আহত আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারাও শঙ্কামুক্ত নন।

সাবেক প্রেমিকার বিয়েকে কেন্দ্র করে এমন আক্রোশ ব্যক্তির আক্রমণাত্মক মনোভাবের পরিচায়ক। সম্পর্কে থাকে বিশ্বাস-আস্থা-ভরসা সর্বোপরি ভালোবাসার পরম অনুভূতি। কিন্তু যখন সম্পর্কের মধ্যে এগুলোর যথেষ্ট অভাববোধ হতে থাকে তখন মানুষ ধীরে ধীরে দূরে সরতে থাকে। সে হোক প্রেমের সম্পর্ক বা দাম্পত্য সম্পর্ক। একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো বিয়ে বাড়িকে বিস্ফোরক দিয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করার মানসিকতা কতটা ভয়াবহ তা বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রই অনুমান করতে পারেন। এতে নারীর প্রতি পুরুষের সর্বোচ্চ ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে।

আমােদের সমাজে এমন ঘটনা অহরহ না ঘটলেও নারীরা ব্যক্তিগতভাবে প্রাক্তনের দ্বারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হন না! সাবেক প্রেমিক বা স্বামীর দৌরাত্ম্যে অনেক নারীর জীবন ওষ্ঠাগত হয়। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইলিং, ভয় দেখিয়ে টাকাকড়ি হাতিয়ে নেওয়া , নানাবিধ কটু কথার মাধ্যমে সাবেক প্রেমিকার বিয়ে ভেঙে দেওয়া এ সমাজে অহরহ ঘটছে। নারীরা সম্মান- আত্মমর্যাদার ভয়ে অনেক সময় মেনে নিয়ে তাদের মর্জি মতো চলতে বাধ্য হয়। কেউবা ভীত হয়ে পিছু হটে। তবে এ ধরনের আক্রোশ কারোর জন্যই সুফল বয়ে আনে না।

ফলে নারীকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। ভালো-মন্দের বিচার করতে হবে।

ভরতের ছত্রিশগড়ের এই ঘটনা প্রমাণ করে মানুষের ভেতরে পশুত্ব কতটা! একটি ছোট্ট ঘটনাকে জীবনের তাগিদে ভুলে যাওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি অধিকাংশের। পৃথিবীর যত বড় বড় যুদ্ধ -বিগ্রহ সবই প্রায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে যদি এর সুফল- কুফল বুঝতে সক্ষম হতো তাহলে হয়তো হৃদয়ের কোণে কোথায় একজায়গায় ভালোবাসাটা সঞ্চিত থাকতো। বা দুজন মানুষের দুটি পথ অন্যত্র ভালোমতো গড়ে উঠতে সক্ষম হতো। বরং তা না করে আক্রোশের জেরে ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।আর যখন এর ভয়বহতা এতটা প্রকট তখন এই নারীর সঙ্গে বিচ্ছেদই যথার্থ। নতুবা দাম্পত্য জীবনের যেকোনো সমস্যাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করতেও বাধতো না এই পুরুষের জন্য।

তার এই আক্রোশে স্পট ডেড হয় বরের। এবং হসপিটালে মৃত্যু হয়েছে পাত্রের ভাইয়ের। এছাড়া এখনও হসপিটালে কয়েকজন। তবে এ ঘটনার পেছনের কারণ আক্রোশ। মানতে না পারা। তবে এই পুরুষের যে ভয়াবহতা প্রকাশিত হয়েছে এর মাধ্যমে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। তিনি মানবিক মানুষ নন। ভয়বহ- হিংস্র দানব। নাহলে কিভাবে এতটা প্রবল আরোশ উগ্রে দিতে পারে!

এই ঘটনা থেকে নারী – পুরুষ উভয়ের জীবন সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। একইসঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আরও যত্নবান হওয়া উচিত। অর্থাৎ একটি সম্পর্কে যাওয়ার আগে তার পুরোটা না জেনে- বুঝে, বিচার- বিবেচনা না করে হুট করে জড়িয়ে পড়া জীবনের জন্য নেতিবাচক। সে হোক প্রেমের সম্পর্ক বা বিয়ের। নারীদের নিজেদের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। আর প্রাক্তনের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা না থাকুক অন্তত তার ক্ষতি করার মানসিকতা থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। এটাই মানবধর্ম। এতে দুপক্ষেরই বেঁচে যাওয়া সম্মানটুকু অন্তত বজায় থাকে। ফলে নারীকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। ভালো-মন্দের বিচার করতে হবে। নতুবা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নখরাঘাতে জীবন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ