Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লৈঙ্গিক সমতায় টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ: প্রাসঙ্গিক দুটি কথা

আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমতা বিধান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরিবার ও সমাজে বিভিন্ন দিক থেকে নারীরা বৈষম্যের শিকার। নারীর চলাফেরার জন্য নিরাপদ পরিবেশ যেমন গড়ে ওঠেনি তেমনই নারীর স্বাধীন জীবন তো নয়ই। নারী মানেই পরিবার-সমাজের চোখে বাড়তি চাপ প্রয়োগের জায়গা। পুরুষের প্রতি এই সমাজের কোনোই হম্বিতম্বি না থাকলেও নারীর প্রতি আরোপিত হয় সমুদ্র সমান বাধার দেয়াল। তবু আধুনিকতার যুগে কিছু নারী এই বাধার দেয়াল টপকে নিজের লক্ষ্যের দিকে সদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে। রচনা করছে নিজের বিজয়ের গল্প। যা আরও অনেক নারীর প্রেরণা হয়ে দেখা দিচ্ছে।

নারীর সম্মুখে বাধার দেয়াল তোলে মূলত পরিবার। এই পরিবার নামক প্রতিষ্ঠান থেকেই কন্যা শিশু এবং ছেলে শিশুর মধ্যে নানাবিধ বৈষম্য গড়ে ওঠে। আর তার প্রতিফলন পেতে হয় নারীকে আজীবন। পরিবার থেকে বের হয়ে বাইরের জগতে তৈরি হয় আরেক সমস্যাপূর্ণ পৃথিবীর। সেখানেও নারীকে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়।

কেউবা সমস্যাকে সমাধানের পথে এগিয়ে যায় শত প্রচেষ্টায় আবার কেউবা জীবনের জরাজীর্ণতায় লিপ্ত হয়ে বিপথগামী হয়, পরাজয় বরণ করে। ব্যক্তি ভেদে যেমন মানুষের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন তেমনই মানসিক স্থিতি, শক্তিও আলাদা। ফলে সবাই পরিস্থিতির সঙ্গে যে মোকাবেলা করতে সক্ষম হন এমনটা নয়। তবে মনের দিক থেকে অপ্রতিরোধ্য শক্তির ধারক নাহলে নারীকে নেতিয়ে পড়তে হয়। হার মানতে হয় ভাগ্য নামক দুর্ভাগ্যের কাছে!

পরিবার- সমাজে নারী- পুরুষের সমতা নিশ্চিতে সবার একযোগে কাজ করা জরুরি। কারণ মানুষ হিসেবে যদি একে অপরের প্রতি সহোযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে পাশে না দাঁড়ায় তবে জাতির কল্যাণ থমকে দাঁড়াবে। এলক্ষে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও জরুরি। তাই নারী-পুরুষের সমতা ও উন্নয়ন তরান্বিত করতে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উন্নয়নের মূল ধারায় নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করে, সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “গত দেড় দশকে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়েছে। ৪৪ টি মন্ত্রণালয়ে নারীর জন্য আলাাদা বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নানাবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে প্রদত্ত বাজেট পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই জেন্ডার বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন, নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিতকরণ ও সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষে সরকার টাস্কফোর্স প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারে।”

এই সভায় নারীর চাহিদা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় এনে নারীবান্ধব তথ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়। বর্তমান সময়ে এসে নারীরা সামনে অগ্রসর হলেও নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত করা সম্ভব হয়নি। পারিবারিক- সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি নারী-পুরুষের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তবে নারীরা অনেকাংশে নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবেন। এবং সমাজ এবং দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আলোচনা সভায় নারী-পুরুষের সমতা ও উন্নয়ন তরান্বিত করতে টাস্কফোর্স গঠনের যে সুপারিশ করা হয়েছে এর পক্ষে যথাযথ ও কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সমাজ থেকেও নারীর প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে। এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ