Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে বিচার বন্ধ হোক

নারীকে এক ঝলক দেখার পর সবার আগে তার যেই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়, তা হলো, তিনি কতটা সুন্দর? আর এই সৌন্দর্য মানে তার বাহ্যিক সৌন্দর্য। বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে মাতামাতি করার যে বিশেষ প্রবণতা আছে, সেটা এতটাই জনপ্রিয় যে, চেহারা ছবির সৌন্দর্য নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু প্রভাব বিস্তার করার চাইতেও যে বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো, নারীর সৌন্দর্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করে কে? পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো।

তবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পুরুষরা এই সৌন্দর্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণ তাদের স্বার্থ হাসিল করা। পুরুষতান্ত্রিকতার সেই ফাঁদে পা দিয়ে দেন নারীরাও। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার দিকে না তাকিয়ে জোর দেন কিভাবে নিজেকে বাহ্যিকভাবে আরও সুন্দর করে তোলা যায়।

কিন্তু সৌন্দর্যের যে একটা প্যারামিটার সবসময় বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে কেন লোকে বিচার করে? বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে যে মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী হয়ে যাচ্ছে দাম্ভিক , আবার যারা এই মাপকাঠিতে নিজেদের মান খুঁজে না পান, তারা হয়ে যাচ্ছেন হতাশ। তারা নিজেরা মানসিক হীনণ্মন্যতায় বিপর্যস্ত থাকে। আর না থেকেই বা উপায় কী! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে এই সৌন্দর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।

প্রশংসায়
কাউকে যখন আমরা প্রথম দেখি তখন আমরা এটা চিন্তা করতে পারি সে কতখানি নিজেকে গুছিয়ে রেখেছে। তার পোশাক আশাক সম্পর্কে রুচি কী। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা প্রশংসা করতে গিয়ে তাদেরকে আরও বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের আওতায় ফেলে দেই। মেয়ের গলার আওয়াজ যদি ভারী হয়, তাহলে আমরা সেটাকে শ্রুতিমধুর বলে মেনে নেই না।

বিয়ের ক্ষেত্রে
বিয়ের বয়স যখন কোনো ছেলে বা মেয়ের হয়, তখন তাদের প্রক্রিয়াটা একটা বাজারের দরদামের মতো হয়। কোরবানির গরু কেনার সময় মানুষ গরুর দাঁত দেখে, গায়ে কতটুকু মাংস আছে আর শারীরিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর কি না দেখে। বিয়ের সময়ও একটা মেয়েকে সেভাবে দেখা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে অবশ্য তার চাকরি ও ক্যারিয়ারটা বেশি গুরুত্ব বহন করে৷ তবে মেয়েদের চাকরি আর ক্যারিয়ার কিংবা পড়াশোনার চাইতে বেশি দেখি হয়, কোন মেয়ের চুল কত বড়, চেহারা কত সুন্দর, এই সব নিয়ে মাথা ঘামানো হয় বেশি।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে তো দূরের কথা নারী হিসেবেও দেখে না , দেখে তাদের তৈরি পুতুল হিসেবে। যে পুতুল দেখতে যত সুন্দর হবে বাজারে তার চাহিদাও বেশি হবে। আর সেই চাহিদাকে নিজেদের অর্জন মনে করে নারীরাও ছোটেন মরীচিকার পেছনে।

কর্মক্ষেত্রে
একজন নারী যখন দেখতে সুন্দর হয় , খুব সহজেই তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আকৃষ্ট হয়ে যায় এবং তার চাকরি বা প্রোমোশনের সম্ভাবনা অন্যান্য নারীর তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বেশি হয়। আর এমন অবস্থায় অন্য নারীরাও ব্যস্ত হয়ে যান নিজেকে কিভাবে বাহ্যিকভাবে আরও সুন্দর করা যায়, সেই চিন্তায়। আর এভাবেই কর্মক্ষেত্রেও নারীরা শুধু একটি শোপিস বা পুতুল রূপে দাঁড়িয়ে থাকে।

মিডিয়া জগতে
একটা সময় ছিল, যখন নায়িকা মানেই তার শরীরের একটা নির্দিষ্ট মাপ ছিল। ৩৬-২৪-৩৬। এই মাপ হলো আদর্শ শারীরিক গঠন একজন সুন্দর নারীর৷ আর গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা। ফর্সা গায়ের রঙ ছাড়াও অনেক নায়িকা ছিলেন। কিন্তু তারা একদমই ‘আপ টু দ্য মার্ক’ হিসেবে গণ্য হননি। ম্যাগাজিন এর কাভার পেইজ থেকে শুরু করে সিনেমার নায়িকা সবাইকে এই সমাজের বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের আওতায় বাক্সবন্দি করা হতো। হলিউড-বলিউডে এই বিউটি স্ট্যান্ডার্ড ভাংতে শুরু হয়েছে বটে কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এর জন্য তৈরি হয়নি দর্শক কিংবা নির্মাতারা।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে তো দূরের কথা নারী হিসেবেও দেখে না, দেখে তাদের তৈরি পুতুল হিসেবে। যে পুতুল দেখতে যত সুন্দর হবে বাজারে তার চাহিদাও বেশি হবে। আর সেই চাহিদাকে নিজেদের অর্জন মনে করে নারীরাও ছোটেন মরীচিকার পেছনে। আর নারীকে বিচার-বিশ্লেষণ করার এই প্যারামিটার ভাঙতে সবার আগে নারীকেই সোচ্চার হতে হবে। নিজেকে ঐ প্যারামিটারের যোগ্য তৈরি করা বন্ধ করতে হবে । শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে না ছুটে নিজেকে সমাজে চলার মতো করে যোগ্য ও দক্ষ গড়ে তুলতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ