Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী উদ্যোক্তার উন্নয়ন ও আইটিসির সহায়তা

নারীর উন্নয়নকে তরান্বিত করতে বর্তমান সরকার বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে নারীরা স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হচ্ছে। তবে ঘরে- বাইরে এখনো নারীরা যেভাবে নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে, তাকে রুখে দিতে হলে নারীদের আরও সাহসের সঙ্গে সামনের দিকে হাঁটতে হবে। তাই নারীর উন্নয়ন যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে জাতি থমকে দাঁড়াবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ক্ষতির মুখে পড়বে। এলক্ষ্যে নারীর উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে কার্যকরী পদক্ষেপ। নারীরা দেশের সীমানায় এবং বহির্বিশ্বেও যেন ভূমিকা রাখতে পারে, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানাবিধ উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলেও নারীদের কর্মস্পৃহা এবং মনোবলের কারণে নারীরা এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতকে মোকাবিলা করার সাহস পাচ্ছে।

২০২০-২১ সালে করোনা অতিমারীর কারণে অনেক নারীই চাকুরিচ্যুত হয়। এই সময়ে জীবনের তাগিদে নারীরা নতুনভাবে পূর্ণ উদ্যোমে নিজেদের ভাগ্যান্নোয়নে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কারণ করোনা মহামারীকালীন উপার্জন বন্ধ হয়ে পারিবারিক ও মানসিক চাপে থাকা এসব নারী নতুনভাবে কাজে যুক্ত হতে শুরু করেন। শূন্য থেকে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে এখনও।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এর কারণে উদ্যোক্তাদের ৬৫ শতাংশেরই কোনো উপার্জন নেই। এ মহামারীর সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ছুটি ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আরোপের ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীদের ৫৮ শতাংশই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের ৬৭ ভাগ আয় কমে গেছে, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মজীবীদের আয় কমেছে ৬৬ ভাগ। এর ফলে ৯০ ভাগ নারী উদ্যোক্তা এবং ৮৪ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।

গত ৮ই জুলাই থেকে ২৪শে জুলাই দেশের ২৮ জেলার ১৭৪টি উপজেলায় এ জরিপটি পরিচালিত হয়। মোট ১ হাজার ৫৮৯ জন নারী এতে অংশ নেন, যার মধ্যে ৫৮৯ জন উদ্যোক্তা এবং ১ হাজার জন কর্মী। অংশগ্রহণকারীদের ৩২ ভাগ হলেন গ্রামীণ নারী, বাকি ৬৮ ভাগ শহরাঞ্চলের।

সমীক্ষায় উঠে আসে- এই দুর্যোগকালে উদ্যোক্তাদের ৩৩ শতাংশই তাদের ব্যবসায় উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ৪১ ভাগ উদ্যোক্তা কর্মীদের কর্মবিরতিতে পাঠিয়েছেন। ৮৬ শতাংশ উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, ব্যবসায়িক সংকটগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে তারা কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেননি। কর্মজীবী নারীদের ৩৯ শতাংশ বলেছেন-টিকে থাকার জন্য আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে তাদের ঋণ নিতে হয়েছে।

এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলার লক্ষে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং এর কার্যকরী বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই নারী-উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং নারী-উদ্যোক্তা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার। ১৫ মার্চ রাজধানীর গুলশানে ‘সিক্স সিজন হোটেলে’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ‘হাব’ হিসেবে ঘোষণা করে এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় নারী-উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে আইটিসি। এ বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আইটিসি বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান ও ল্যাটিন আমেরিকার নারীদের উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশকে এই কার্যক্রমের ‘হাব’ হিসেবে যুক্ত করার অংশ হিসেবে সম্প্রতি মরিশাসে ক্রিয়েটিং ডিজিটাল অ্যাসেটস ফর ইয়র বিসনেস টট (টিওটি) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল। 

বাংলাদেশ, ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মরিশাসে পরিচালিত এ কর্মসূচির মাধ্যমে ১২শ’ নারী-উদ্যোক্তা পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৮৪টি সরাসরি ও ভার্চুয়াল মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হবে। ৪ হাজার ৬শ’ নারী-উদ্যোক্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৪৯ জন নতুন কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হবে, যাদের ৭৩ শতাংশ নারী। এছাড়াও  ৯১টি নারী-উদ্যোক্তা সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে নারীবান্ধব ব্যবসায়িক নীতি প্রণয়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের সাথে নারী-উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়তা করবে এসএমই ফাউন্ডেশন ও আইটিসি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দ্বার উন্মুক্ত। যার মাধ্যমে নারীরা আরও অধিকগুণ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে এবং নিজেরাও সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। বর্তমান সময়টা কঠিন সংগ্রামের। চারিদিকে ওঁৎ পেতে থাকা হায়েনার দলের নখাঘাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে নারীকে স্বাবলম্বী হওয়ার কোনোই বিকল্প নেই। তবে নারীর মনোবল, সাহস থাকলেও অনেক সময় সঠিক উদ্যোগ বা সহোযোগিতার অভাবে নারীরা মাঝ পথে থমকে দাঁড়ায়। তবে সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশন ও আইটিসির সম্মিলিত উদ্যোগ নারীর কর্মস্পৃহা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে নারীরা তাদের সঠিক পথের দিশা পাবে। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা সৃষ্টি করতে আশার আলো জাগানিয়া এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ