চিকিৎসকের লালসার শিকার যখন নারী-কন্যাশিশু
নারী নির্যাতনের একেকটি ঘটনা সামনে আসে আর আমাদের সমাজের কিছু মানুষের কদর্য মানসিকতা কতটা নিম্নমুখী হচ্ছে, এসব ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। নারী ও কন্যাশিশুরা কোথাও নিরাপদ নয়। এক শ্রেণির বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ নারীকে সর্বদাই ভোগের সামগ্রী ভাবে। কন্যা শিশু হোক বা নারী তাদের লালসার কাছে কেউ-ই ছাড় পায় না। শুধু অশিক্ষিত, বখাটের দ্বারাই সমাজে এমন ঘটনা ঘটছে, এমনটা নয়। বরং উচ্চশিক্ষিত পুরুষরাও এ ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তাহলে সমাজের এই নোংরামি, কলুষতার জন্য কে বা কারা দায়ী?
এসব ঘটনাই প্রমাণ করে, পারিবারিক শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি। কারণ একজন চিকিৎসকও যখন লালসা নিবৃত্ত করতে নারীকে ভোগের সামগ্রী ভাবেন এবং নারীকে উত্যক্ত করতে থাকেন তখন শিক্ষার ওপরই সব দায় বর্তায়। সে পারিবারিক শিক্ষাই হোক আর পুথিগত শিক্ষাই হোক।
বর্তমানে আমাদের সমাজে শিক্ষিতের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অর্থাৎ শিক্ষিত মানেই সভ্য, সুশীল, নম্র- ভদ্র, মনুষ্যত্ব ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ গঠন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে এ সমাজে শিক্ষার হার বাড়লেও মানুষের হার দিন দিন কমছে। অর্থাৎ এটাই বলা চলে যে, শিক্ষা এখন মানুষ নির্মাণের জন্য নয় বরং শিক্ষা এক ধরনের পুঁথিগত বিদ্যা যার দ্বারা টাকা কামায় করার একটা পথ পায় মানুষ। এর প্রেক্ষিতে প্রশ্ন থেকে যায়, মানবিকতাসম্পন্ন সুশিক্ষা কয়জন ব্যক্তি গ্রহণ করছেন এ সমাজে। সবাই জীবনের দৌড়ে আগে থাকতে গিয়ে সন্তানকে ঠিকই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করছেন কিন্তু কেউই সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি নজর দিচ্ছেন না। ফলে মানুষের বহিরাবরণ চাকচিক্যময় হলেও ভেতরটা ফাঁপা থাকছে।
মানবিকতা, মানুষ্যত্বের চর্চা এদের মধ্যে থাকছে না। তাই পরিবারগুলোকে সন্তানকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ওপর নজর দেওয়া জরুরি। নাহলে তিনি শিক্ষক হোন বা চিকিৎসক বিকৃত রুচির জন্য সব নারীই এদের লালসার শিকার হবে! এবং এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে আজকাল।
গত ১ মার্চ খুলনা প্রেসক্লাবে এক নারী তার ছোট্ট কন্যা শিশুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এবং এই নারীর উপস্থাপিত বক্তব্য সাধারণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অসুস্থ কন্যা সন্তানের চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকের লালসার শিকার হন নারী ও তার শিশু কন্যা। ছোট্ট শিশুটির হাতের আঙুলও হারাতে হয়েছে এই অসৎ ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায়। গভীর রাতে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ করে উত্যক্ত করা থেকে শুরু করে সন্তানের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে তাকে নানারকম কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাবও দিয়েছে এই ডাক্তার। এমনকি সন্তানকে নিয়ে যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছে তখন তাকে নানাভাবে অপদস্ত করারও চেষ্টা করেছেন। সমাজের এসব ঘটনা জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে!
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, কোন সমাজের বাসিন্দা আমরা। দিনে দিনে মানুষের এত হিংস্ররূপ দেখা দিলে নারীরা কোথায় যাবে। নারী নির্যাতনকে রুখতে হলে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা সেবা দেওয়ার নামে নারীদের সঙ্গে এমন আচরণে লিপ্ত হয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একটি ছোট্ট শিশু কন্যা কোনোই অপরাধ না করলেও তার অঙ্গহানি হয়েছে। যা মানবিকতার চরম অবক্ষয়। এমন বিকৃত মানুষ সমাজের জন্য ভয়ংকর! এমনকি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে মা ও মেয়ের জীবন এভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। তাই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কঠিন শাস্তির আওতায় না আনলে এসব বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সমাজে আরও শেকড় গেড়ে বসবে!