আজ কস্তুরবা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী
বয়স মাত্র ১৪ বছর। বর তার থেকে বছরখানেকের ছোটো। গুজরাটের উপকূলের শহর পোরবন্দরে বেড়ে ওঠা বছর ১৪র কিশোরী, বিয়ের কতটুকুই বা বোঝে সে। নতুন জামা পরা, মিষ্টি খাওয়া, আর ‘বর’ নামক প্রায় সমবয়সী এক কিশোরের সঙ্গে খেলাধুলো করা- সবমিলিয়ে বিয়ে ব্যাপারটা বেশ মজার মনে হয়েছিল সেদিন। দাম্পত্যজীবন বলতে আমরা যা বুঝি, সে অধ্যায় শুরু হতে তখনও অনেক দেরি।
কেমন ছিল, এই দুই নারীপুরুষের দাম্পত্য? মনের মিল হত? দাম্পত্যকলহ? ছেলেবেলায় পড়াশুনা করার সুযোগ মেলেনি। ছিল না অক্ষরজ্ঞানটুকুও- অথচ বিশ্বজুড়ে মানুষের আগ্রহ ও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে দীর্ঘদিন ছিলেন তিনি। তার অকথিত জীবন আর দাম্পত্য নিয়ে বিশ্বের নানা ভাষায় লেখা হয়েছে কত না গবেষণার বই। আর হবে না-ই বা কেন! স্বাধীনতা- পূর্ববর্তী ভারতের অঘোষিত ‘ফার্স্ট লেডি’ তো তিনিই। তিনি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথিকৃৎ মহাত্মা গান্ধী’র সহধর্মিণী কস্তুরবা গান্ধী।আজ ২২ ফেব্রুয়ারি, আজ তার ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
নারী স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা রাজনীতিবিদ মহাত্মা গান্ধীর ভাবনা-চিন্তা ছিলো অন্যরকম। যদিও স্বামী হিসেবে বেশ আধিপত্যকামী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তবে, কস্তুরবা ছিলেন একেবারেই ভিন্ন ধাতুতে গড়া। প্রথম সন্তানের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ১৮৯৬ সালে দুই ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমান দক্ষিন আফ্রিকায়। স্বামীর কর্মস্থল যে সেখানে। এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে তাএ রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধে কারাবাসেও ছিলেন তিনি। আর পাঁচজন ভারতীয় নারী থেকে অনেকটাই অন্যরকম ছিলেন মহাত্মার সহধর্মিনী।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে ১৯১৪ থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে তুলে ধরেন গান্ধীজী। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও প্রতিটি ক্ষেত্রে উপযুক্ত সহধর্মিণীর মতো স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামীর বহু সিদ্ধান্তেই দ্বিমত ছিল তার। তারপরও সমাজ আর সংসারের প্রতি কর্তব্যপালনে দুবার ভাবেননি কস্তুরবা। তার ব্যক্তিত্বের দ্বিধা কখনও মহাত্মার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং, বিপদে আপদে সবার আগে স্বামীর হাত ধরে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রী কস্তুরবা’ই।
অক্ষরজ্ঞান ছিল না, তবু মানবিক শিক্ষার আদর্শ ছিলেন তিনি। তার ধর্মবিশ্বাস কখনও তার স্নেহের রাস্তায় প্রতিবন্ধক হয়নি। একনিষ্ঠ বৈষ্ণব হয়েও অনায়াসে কোলে টেনে নিতে পারতেন গরীব হরিজনের মেয়েকে। প্রেম আর স্নেহ এই দুই গুণেই তিনি ছিলেন অনন্য আর একক। ব্যক্তিজীবনের দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে তার চারিত্রিক মাধূর্য্যই তাকে করে তুলেছিল আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসীর ‘সকলের মা’।
কস্তুরবাঈ (কস্তুরবা)মোহনদাস গান্ধী ১৮৬৯ সালের ১১ এপ্রিল জন্মগ্রহন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪, ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে তিনি পাড়ি দেন পরপারে। আজ কস্তুরবার ৭৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ভারতবাসীর মা’কে।