Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলে ছাত্রী নির্যাতন: হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

‘নির্যাতন’ সবসময়ই ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য বার্তা বহন করে। আর তা যদি হয় নারী কর্তৃক নারীরই নির্যাতন তাহলে তো মনুষ্যত্ব-বিবেবকহীন পশুত্বের কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। এই অপশোষণ-বঞ্চনা কেমনভাবে একজন নারী হয়ে অন্য নারীর প্রতি করতে পারে, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!

আধুনিক জীবনযাপন এবং সভ্য মানুষের ‘তকমাধারী জাতি’ আমরা। তবু মানুষ হতে হলে ন্যূনতম যেটুকু মূল্যবোধ প্রয়োজন, সেটুকুও অধিকাংশই বিসর্জন দিচ্ছে আজকাল। তারওপর রয়ে গেছে শিক্ষা! শিক্ষার প্রধান এবং একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। আর মানুষ হওয়ার প্রধান শর্ত এই যে, তাকে জ্ঞান- বোধ, বিবেক-মনুষ্যত্ব এবং একইসঙ্গে সৎ ও চরিত্রবান হতে হবে। তবে আজকাল শিক্ষার সেই মহত্তম উদ্দেশ্যের ওপরও মরচে পড়েছে! বর্তমানে শিক্ষা শুধু কাগজে-কলমে। মগজে নয়। খুব দুঃখের সঙ্গে হলেও বলতে হয়, জাতি আজ কঠিনভাবে রোগাক্রান্ত! যারা আশার আলো জাগাবে সেই তরুণ সমাজ ঘুণে ধরা মস্তিষ্ক আর অন্ধ সংস্কার, জোর-জুলুমে ব্যস্ত! ফলে নারী কিংবা পুরুষ যেই হোন না কেন উভয়ই জরাগ্রস্ত। শোষণ-নিপীড়ন এ সমাজে আজ মজ্জাগত! ভয়াল এক কালোছাঁয়া যেন সর্বত্র গ্রাস করছে ধীরে ধীরে!

তা নাহলে নারী হয়ে স্বজাতির ওপরই তথা মানুষের ওপর কিভাবে নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত আচরণ করতে পারে! কিভাবে হয়ে উঠতে পারে নারীরূপী পিশাচ! এত কথার অবতারণা এই কারণে যে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অপপ্রথা চালু আছে র‍্যাগিং। যার মাধ্যমে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুরনো শিক্ষার্থীরা ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তাদের (অপেক্ষাকৃত সিনিয়র) পাওয়ার এবং পজিশন বোঝাতে নতুনদের ওপর তাদের অপকৌশলের প্রয়োগ করে। যদিও বর্তমানে এগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক কৌশলের সম্পৃক্ততা রয়েছে অনেকটা। আর ছেলে বা মেয়েদের হলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের যোগসাজশ সবচেয়ে বেশি। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে খুব একটা সোচ্চার হতে পারে না। প্রশাসনের নানারকম বিধিনিষেধ থাকার কারণে। তবে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা এসবের ধার ধারেন না। ফলে নারী বা পুরুষ শিক্ষার্থী কেউই রক্ষা পায় না এই তথাকথিত রাঘববোয়ালদের হাত থেকে। এর ফলে আজকের যুগে এসেও দাস প্রথার মতো শিক্ষার্থীরা নির্যাতিত হচ্ছে। নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ছাত্রীর হাতে ছাত্রীই!

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পড়াশোনার চেয়ে অপ-কর্মকাণ্ডের আখড়া। পড়াশোনা করে সুন্দর-কল্যাণময় পথের দিশারী না হয়ে কিছু শিক্ষার্থী পাওয়ার ও পজিশনের চর্চায় ব্যস্ত থাকে। তাদের তথাকথিত কিছু চ্যালা (সাগরেদ) নিয়ে এসব অপকৌশল প্রয়োগ করে। এসব অপকর্মকে রুখে দিতে হলে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত হলে ওঠা নবীন এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীকালে ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। নারী নির্যাতনের এ হেন চিত্র কোন নতুন ঘটনা নয়। বিভিন্নভাবে নারীরা অপদস্ত হচ্ছে নারীদেরই হাতে।

নারীরা এমনিতেই সর্বত্র অবহেলিত- নির্যাতিত। তারওপর যদি নারীরাই নারীর শত্রু হয়ে ওঠে তবে এ পৃথিবীতে নারী জাতির টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে। নারীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার খুবই ঘৃণ্যতম অপরাধের শামিল। নারীর পক্ষে নারীর অবস্থান না হয়ে বরং এই নারী কর্তৃকই বিবস্ত্র ও মারধোর মনুষ্যত্বের প্রশ্ন তোলে! কোন নারীকে আমরা ভবিষ্যতের ভার অর্পণ করতে চাচ্ছি! যে নারী কিনা তারই স্বজাতির ওপর জোর-জুলুমে ব্যস্ত! ভাবতে হবে নারীদেরই। আর ঠিক ততটাই সচেতন হতে হবে এই নারী নামক কীটদের থেকে! যারা আগলে রাখার মহত্তম মন্ত্র ভুলে রক্তের নেশায় ছুটতে শুরু করেছে। খসে পড়ুক সব অপকৌশল। শাসন-শোষণের শৃঙ্খল। মানুষ রূপী পিশাচ নয় বরং মানুষকে চায় এ পৃথিবী। যারা কল্যাণ- ভালোবাসার মর্মে কণ্ঠরোধ করবে সব অপশক্তিকে। জেগে উঠুক নারীর প্রকৃত মন- মনন, ভালোবাসার অনুভূতি। নারী হয়ে নারীর পাশে দাঁড়াক মমতার স্পর্শে। ভালোবাসার চিরন্তন বাণী নিয়ে। ঘুচে যাক জ্বরা। জেগে উঠুক নারীত্ব।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ