রাণী রাসমণির মৃত্যুবার্ষিকী আজ
জানাচ্ছি নারীনী রাসমনির কথা, মহীয়সী নারী একদিকে যেমন ছিলেন একজন সমাজসেবক ঠিক তেমনি অন্যদিকে ছিলেন একজন ঈশ্বর প্রেমী মানুষ। আজ এই মহিয়সী রাণী রাসমণির মৃত্যুবার্ষিকী।
রাণী রাসমণি ২৬ সেপ্টেম্বর ১৭৯৩ সালে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণার কোণা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম হরেকৃষ্ণ দাস। কলকাতার জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রাজচন্দ্র মরের সঙ্গে মাত্র এগারো বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি পরিবারিক জমিদারি ও ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শিগগিরই এই কাজে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন। কলকাতায় দক্ষিণেশ্বর মন্দির নির্মাণ তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসকে নিযুক্ত করেন (১৮৫৫)। রাসমণি নিম্ন বর্ণজাত হওয়ায় ব্রাহ্মণগণ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরটি নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মন্দির নির্মাণের কাজে অবিচল থাকেন ও কৃতকার্য হন। সমাজসেবার সঙ্গে সঙ্গে এটি ছিল তার গভীর ধর্মানুরাগের পরিচায়ক।
তিনি গঙ্গা নদীতে দরিদ্র জেলেদের মাছ ধরার অধিকার আদায়েও সক্ষম হন। রাণী রাসমণি দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়ের ওপর আরোপিত নদীতে মাছ ধরার শুল্ক তুলে নিতে ব্রিটিশদের বাধ্য করেন। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরার সুবিধার্থে গঙ্গায় চলাচলকারী কয়েকটি স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করতে তিনি সক্ষম হন। এ জন্য তাকে প্রচুর অর্থও ব্যয় করতে হয়েছিল। পূজার মিছিল শহরে শান্তি-শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এ অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার রাণী রাসমণিকে অর্থদণ্ড দেন। কিন্তু কলকাতার জনগণের চাপের মুখে তারা তা প্রত্যাহার করে নিতেও বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ওপর রাণী রাসমণির কর্তৃত্ব বজায় ছিল। এগুলোর মধ্যে জানবাজার, রাসমণি বাজার এবং যদুবাবু বাজার উল্লেখযোগ্য। যদুবাবু বাজার নামকরণ হয় তার পৌত্রের নামানুসারে। অন্যান্য অনেক জনকল্যাণকর কাজের জন্য রাণী রাসমণি প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। তিনি সুবর্ণরেখা নদী থেকে পারি পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য একটি রাস্তা নির্মাণের কাজ তদারকি করেন।রাণী রাসমণি তার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে দৃড়চিত্ত ছিলেন। তিনি যে কাজকে সঠিক বলে বিবেচনা করতেন, তাই-ই প্রতিষ্ঠিত করতেন। তার সময়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে রাণীর ঘটনাবহুল দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বাংলার ঘরে ঘরে রূপকথার গল্পের মত প্রচলিত ছিল। হিন্দুধর্মের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল অবিচল।
রাসমণির ধর্মীয় ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, কলকাতার জনগন তাকে ‘রাণী’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করে। ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাণী রাসমণির মৃত্যু হয়।