Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হোক

এই তো সেদিন, বন্ধুরা সব আড্ডায় বসলাম। কথার ছলেই একজন বলে উঠলো, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী; আর আটকায় কে তাদের। তারাই এখন সর্বেসর্বা।’ কথাটা সবাই হেসেই উড়িয়ে দিলো। সংসদের অধিবেশনেও কেউ একজন এই কথাটা বলেছিলেন। পুরো সংসদেও হাসির রোল পড়ে গেলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে গিয়েছিল এই ভিডিও। ছিল অনেক শেয়ার আর হা-হা রিয়্যাক্টের বন্যা। কিন্তু, আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র কী বলে?

আমাদের দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ নারীর দখলে; এমন কথা শুনতে ভালোই লাগে। তবে একটি মুদ্রার যে দুটি পিঠ থাকে, এই কথাটা হয়তো আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা আসলে ভুলে যাই। এই সুখসত্যের বিপরীতে যে কিছু অপ্রিয় সত্য আছে, তা ভাবার অবকাশ বোধহয় আমাদের মেলে না।

২০২৩ সালে এসেও নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা সীমিত। অনেক যোগ্যতা থাকার পরও নারী তার মত-প্রকাশের স্বাধীনতা পায় না। পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে নারীদের। বিধি-নিষেধের হাজার দেয়াল ভেঙে, শাসন-বারণের পথ পাড়ি দিয়ে, অপমান-বঞ্চনার শিকার হয়ে নারীরা অদম্য শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আপন শক্তিতে বলীয়ান নারী নিজ ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে নিজেকে তৈরি করছে নতুন আঙ্গিকে। নারীরা বিচারপতি, সচিব, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সব জায়গায় নিজেদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

কিন্তু, এসব মুদ্রার এক পিঠের ছবি। মুদ্রার অন্যপাশে আছে নারীর প্রতি চরম অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনের ছবি। বহুকালের পুরনো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো রাজত্ব করছে। ঘরে, রাস্তায়, গণপরিবহনে, অফিসে এমনকি বিদ্যালয়েও নারীরা সুরক্ষিত নয়। খবরের কাগজে পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে নারীর প্রতি সহিংস আচরণের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। পারিবারিক সহিংসতা, যৌন-হয়রানি, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন; এসবে লাগাম যেন টানছেই না। নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। আর এর সুযোগ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় মেয়েদের। একজন সফল নারী হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।

নারীকে পুরুষের তুলনায় দুর্বল ও হীন করে দেখার মানসিকতা বদলায়নি। সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। এ কারণেই এখনো দেখতে পাই, অবলীলায় নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও অশালীন বক্তব্য দিতে দ্বিধা করছেন না অনেকেই। সবশেষে প্রশ্ন, কবে উন্নত হবে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিন্তা-ভাবনা? কবে মুক্তি মিলবে এসব অন্যায়-অত্যাচার থেকে? কবে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সমাজ? কবে!

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ