অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন শাহনাজ মুন্নী
‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৯’ উঠলো কবি ও কথাসাহিত্যিক শাহ্নাজ মুন্নীর হাতে। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামীম কামরুল হক। সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।
কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ধাপে ধাপে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, এই পুরস্কার ছাড়া নারী লেখকদের জীবন যেন অপরিপূর্ণ। এটা নারীদের জন্য একটা স্বীকৃতি। অনন্যা পুরস্কার নারীদের অগ্রগতি যেভাবে এগিয়ে নিয়ে আসছে, সেটি অক্ষুণ্ণ থাকুক।’
পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আপনার যে কারণে সবাই এখানে এসেছেন, সেটা হলো অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন। এবার ইয়াং লেখক শাহ্নাজ মুন্নী পুরস্কার পেয়েছেন। আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি মনে করি, শোহন মুন্নী অনেক দূর যাবেন।’
তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বে যে পরিবর্তন হচ্ছে, সেটার মাধ্যমে আমাদের পরিবর্তনের ধারাগুলো বদলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান এই দুইটার মধ্যে একটা সংঘর্ষ হচ্ছে। নানা রকম বিবর্তনমূলক কথা আসছে। বিবর্তন তো হবেই।’
সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে তাসমিমা আরও বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে আমরা কেউ বই পড়ি না। প্যান্ডামিক আমাদের অনেক পরিবর্তন এনেছে। পরিবর্তিত সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে প্রচুর পড়তে হবে।’
পুরস্কার গ্রহণ করা পর এক প্রতিক্রিয়ায় শাহ্নাজ মুন্নী বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে সাহিত্য চর্চা করছি। এটিই সাহিত্যিক জীবনে প্রথম আনুষ্ঠানিক পুরস্কার। এটি পেয়ে স্বাভাবিকভাবে আমার আনন্দ হচ্ছে। এই পুরস্কারের জন্য অনন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামীম কামরুল হক।
শাহ্নাজ মুন্নী’র জন্ম ১৯৬৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পর পেশা হিসেবে বেছে নেন টেলিভিশন সাংবাদিকতা। একদিকে সামাজিক দায়বোধ থেকে তার পেশাগত জীবন, অন্যদিকে সামাজিক ঘটনা তাকে আলোড়িত করে। সেই তাগিদ থেকে তিনি একের পর এক লিখে চলেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য ও প্রবন্ধ। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৪।
তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, ‘এল ক্রুদ্ধ অন্ধকার’, ‘বাদুর ও ব্র্যান্ডি’, ‘তৃতীয় ঘণ্টা পড়ার আগেই’, ‘পান সুন্দরী’, ‘নির্বাচিত গল্প’, ‘আমি আর আমিন যখন আজিমপুরে থাকতাম’। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এ মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশ হচ্ছে তার উপন্যাস ‘স্নানের শব্দ।
উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর একজন কৃতী নারী-সাহিত্যিক-গবেষককে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ পর্যন্ত যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তারা হলেন—সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, সন্জীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন, সোনিয়া নিশাত আমিন, বেগম আকতার কামাল, বেগম মুশতারী শফি ও রঞ্জনা বিশ্বাস।