ছয় গজ কাপড়ের গল্প!
‘6 yards story ‘, ৬ গজ কাপড়ের গল্প। সাধারণত শাড়ি হয় ৬ গজ কাপড়ের আর সেই কাপড়ের গল্পের মাধ্যমেই ব্যবসা তুলে ধরলেন জেরিন তাসনিম খান লোরা। একজন নারী উদ্যোক্তা, সমাজের টেরাব্যাকা কথা শুনেই যিনি শেষ পর্যন্ত টিকে আছেন এবং হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
লোরার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জের স্থানীয় তাঁতিদের ধারা তিনি কাপড় বানানোর চেষ্টা করেন এবং তার পেজে তিনি তাঁতের শাড়ির ওপরে প্রাধান্য দেন। অলংকারের ক্ষেত্রেও তিনি প্রাধান্য দেন সিরাজগঞ্জে কারিগরদের দ্বারা তৈরি অলংকারে। ২০১৪ তে যাত্রা শুরু হয় তার। তিনি নিজেকে এখনো সফল বলতে রাজি নন। তবে শুরুর দিকে একপ্রকার হোঁচটই খেয়েছিলেন তিনি। তখন অনলাইনের প্রতি মানুষের এতো নির্ভরশীলতা ছিল না। তাই মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কুড়োতে অনেকটা সময় লেগেছিল তার। তবে ধীরে ধীরে হলেও এক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তিনি।
তার পেজে সিম্পল তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে বিয়ের পোশাক, রয়েছে সব ধাঁধানো কালেকশন। নারীদের জন্য বিয়ের পোশাক, গয়না সবই বেশ জনপ্রিয়। গৎবাঁধা সব ডিজাইন নয়, ভিন্নতার ছোঁয়া রাখেন গয়না কিংবা শাড়ির ডিজাইনে। যা মুগ্ধ করে ক্রেতাদের। ছোটো-বড়, সবধরনের পোশাকের সঙ্গে মানানসই পোশাকও পাওয়া যায় এখানে। মডেল অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকেও বেশ কয়েকবার দেখা গিয়েছে তাদের পোশাকে।
নারী হিসেবে এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে এগোনো খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। লোরা একজন আর্কিটেক্ট। পুরোপুরি নিজের জগৎ ছেড়ে আরেক জগতে এসে নতুন কিছু শুরু করা ছিল আরও কষ্টকর। প্রথমেই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পরিবার। বাবার কাছ থেকে শুনতে হয় কেন আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করেও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগলো লোরার। পরিবারের সবাই যখন তাকে একটি ভালো চাকরি করার জন্য বলছিল, তিনি একাই লড়াই করে গেছেন স্বপ্ন পূরণ করতে।
তবে শুরুতে কারিগরদের থেকেও সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাঁকা কথা শুনতে হয়েছিলো লোরাকে। লোরা যখন কারিগরদের বলেছিল শুধু তার জন্য কাজ করতে। তাকে শুনতে হয়েছে এমন কিছু কথা, ‘মেয়ে মানুষ, দুইদিন পর বিয়ে করে ফেলবেন। ব্যবসা বন্ধ করে দিবেন, তখন আমাদের কি হবে।’ তবে লোরা এসব কথায় হাল ছাড়েননি। এগিয়েছেন, সফল হয়েছেন।
তাদের আপাতত কোনো শোরুম নেই। পুরোটাই অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা। তবে ‘6 Yards story’ কে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একটা টপ ব্রান্ড হিসেবে দেখতে চান লোরা। শুধু দেশে নয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও তার ব্রান্ডের নাম ডাক ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
অনন্যা/এআই