পিরিয়ডে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা করবেন
পিরিয়ড বা মাসিক প্রতিটি নারীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নারীদেহের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিমাসে নারীকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে পিরিয়ড। নারীদের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় এটি। বিস্ময়ের ব্যাপার স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নারীরা সবসময় লুকিয়ে রাখতে চায়। আর নারীদের ধারণা, পিরিয়ড লোকলজ্জার বিষয়। তাই কারও সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা তো করেই না, ফার্মেসি থেকেও স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে লজ্জার অন্ত থাকে না তাদের।
শহরের নারীরা এদিক থেকে একটু এগিয়ে গেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা এখনো পিরিয়ডে পুরনো কাপড় ব্যবহার করে। আর সেই কাপড় ধুয়ে রোদে শুকানোর ব্যাপারেও থাকে লজ্জা-উদাসীনতা। তাই গ্রামের বেশিরভাগ নারীই আক্রান্ত হয় জরায়ুর নানা রোগে। আর জীবাণুযুক্ত এই পুরনো কাপড়ের ব্যবহারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে তারা।
পিরিয়ডের সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় সব ক্ষেত্রে। কাপড়ের পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। ৬ ঘণ্টা পরপর ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হবে। নাহলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে। এতে পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি পিরিয়ড চলাকালীন ক্লান্তি ও পিঠ-হাত-পা ব্যথাভাবও অনেকটা কমে যাবে। স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সময় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ খেয়াল করতে হবে। কারণ মেয়াদোত্তীর্ণের ফলে এটির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
বর্তমানে অনেক শহুরে তরুণী স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা স্যানিটারি ন্যাপকিনের কথাই ঠিকমতো জানে না, মেনস্ট্রুয়াল কাপের কথা তো অনেক দূর। মেনস্ট্রুয়াল কাপ হলো একটি ছোট, নমনীয়, ফানেল-আকৃতির কাপ যা মাসিকের সময় নারীরা ব্যবহার করে। এটি সিলিকন বা রাবার দিয়ে তৈরি। যা যোনিতে স্থাপন করতে হয়। এই কাপ মেনস্ট্রুয়ালের রক্ত ধরে রাখে। অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগবে যে, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য কী?
স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে যাদের হেভি-ফ্লো হয়, তাদের একটু অসুবিধেয় পড়তে হয়। লিকেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ৫/৬ ঘণ্টা পরপর চেঞ্জ করার বিরক্তি তো আছেই। আর স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রকৃতিতে মিশে যায় না। তাই পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। আবার ন্যাপকিন কিনতে খরচও হয় অনেক টাকা।
সেদিক থেকে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারই বেশি উপযোগী। মেনস্ট্রুয়াল কাপ একবার ব্যবহারে নির্বিঘ্নে কাটানো যায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে ৫ গুণ বেশি রক্তধারণ করতে পারে এই কাপ। এছাড়া একটি কাপ কিনে সহজেই যত্ন করে রাখলে ব্যবহার করতে পারেন ২ বছরেরও বেশি সময়।
স্যানিটারি ন্যাপকিন ও মেনস্ট্রুয়াল কাপের এই পার্থক্যের জন্যই বর্তমানে তরুণীরা কাপ ব্যবহারে ঝুঁকেছে। আর প্রতিটি নারীর উচিত পিরিয়ডের সময়ে নিজের জন্য নিজের যত্ন নেওয়া। ভালো থাকুক প্রতিটি নারী।