Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে নিজের জীবন মূল্যায়ন করতে হবে

অস্থিতিশীল পরিবেশে জীবনযাপন বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে দিন-দিন। আর এই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে যদি মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তবে সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে! জীবনযাপনের দীর্ঘ পদযাত্রায় সমস্যা আসবে কিন্তু তাকে মোকাবিলা করার মতো সামর্থ্য না থাকলে জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়বে। বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে যেখানে ভালোবাসা, মমত্ববোধ, পারস্পরিক সহায্য-সহযোগিতার হাতগুলো ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে, সেখানে যদি মানুষ নিজেকে মূল্যায়ন না করে তবে ভালো কিছু আশা করা অসম্ভব।

আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা জীবনের জন্য অপরিহার্য। নারীরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জীবনের গুরুত্ব বুঝতে অপারগ ততক্ষণ পর্যন্ত নারীকে রক্ষা করা কঠিন। বর্তমান সময়ের এই অস্থিতিশীল পরিবেশে নারী-পুরুষের উভয়ের জীবনই ক্রমাগত হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নানাবিধ পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সামনে এগুতে হোঁচট খেতে হচ্ছে সর্বত্রই। তবে এক্ষেত্রে সর্বজনীন সমস্যা নারীদের ক্ষেত্রে । কারণ আমাদের সমাজে নারী আজীবন অবহেলিত। পরিবার-পরিজন সর্বোপরি সমাজে নারী অস্পৃশ্য। তবে এই অস্পৃশ্যতা মোকাবিলা করতে হলেও নারীর নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। নিজের জীবনের গুরুত্ব বুঝতে হবে। তবেই কিছুটা হলেও নারীরা মানসিক শান্তির খোঁজ পাবে। ফলে নিজের ক্ষতি করার আগে নারীদের জীবনের মূল্য বুঝতে হবে।

কেরানীগঞ্জে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় ফাহমিদা আক্তার (১৬) নামের এক গৃহবধূ। বাল্যবিবাহের শিকার এই নারী জীবনের গুরুত্ব বুঝতে অপরাগ হয়েই অকালে প্রাণত্যাগ করলো। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন জানান, এই নারীর শরীরের ৯৯ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে আইসিউতে রাখা হয়ছিল। পরবর্তীকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

কথায় আছে, আপন ভালো তো জগৎ ভালো। তাই আপনারে ভালোবেসে এগিয়ে যাক নারী। অপ্রতিরোধ্য এবং দুর্বার গতির কাছে মাথা নোয়াক সব অন্যায়-অত্যাচার-হিংস্রতা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জানা যায়, বিকেলে বাজার থেকে আনা মাছ কাটা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্বামী পারভেজ তাকে চড় দেয়। এর কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে কেরোসিন নিয়ে ফাহমিদা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সী এক নারীর অকাল মৃত্যু! এই ঘটনার দায় প্রথমত নারীর নিজের। দ্বিতীয়ত তার পরিবারের।

এই নারী যদি নিজের জীবনকে এতটা তুচ্ছ না ভাবতেন তবে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। অকালে পৃথিবী ছাড়তে হতো না। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবারে কন্যা সন্তানের কোনই গুরুত্ব নেই। একবার কোনমতে পাত্রস্থ করতে পারলেই তারা ‘হাত ধুয়ে’ বসেন। পরবর্তীকালে তাদের কোনোই দায়িত্ব থাকতে নেই বা থাকে না। ফলে বিয়ের পর নারীর জীবন হয় মৃত্যুর। অর্থাৎ যত কষ্টই হোক যাইহোক না কেন মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে স্বামীর পায়ে দাসীবৃত্তি করেই জীবন কাটাতে বাধ্য হয়।

নারীদের জীবনের গুরুত্ব নিজেকেই বুঝতে হবে। মানবজন্ম একটাই। ফলে হেলায় হারিয়ে, শোকে-দুঃখে জীবনকে কাটিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কিভাবে আগের থেকে কিঞ্চিৎ হলেও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায় তার কঠোর সাধনা করতে হবে। মানুষ সব পারে। শুধু সময়ের অপেক্ষা আর কঠোর সাধনার বিষয়। ফলে নারীদের নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। বাধা-বিপত্তির পথ পেরিয়ে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। যাতে যেই পৃথিবী নারীকে অবমূল্যায়ন করে তারাই যেন নারীর অর্জনকে স্বীকার করে নেয়৷ শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হয়। ফলে নারীরা নিজের জীবনকে সাজাতে ফাহমিদার মতো এ ধরনের পাগলামি না করে।

তুচ্ছ কোন বিষয়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তোলার অর্থ হলো সবথেকে বোকামির পরিচয় দেওয়া। যার ফলে ভালো কোনকিছুই অর্জিত হবে না।তাই নারীরা নিজেকে বুঝতে শিখুক। কথায় আছে, আপন ভালো তো জগৎ ভালো। তাই আপনারে ভালোবেসে এগিয়ে যাক নারী। অপ্রতিরোধ্য এবং দুর্বার গতির কাছে মাথা নোয়াক সব অন্যায়-অত্যাচার-হিংস্রতা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ