ভাঙলো তবে ট্যাবু…
২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ শিরোনামে একটি খবর প্রচারিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে বিষয়টি নিয়ে একটি রিট করা হয়েছিল। ওই রিট শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন গত ২৪ জানুয়ারি। এই রায়ের ফলে ‘পিতৃ পরিচয় না থাকলেও’ মা কিংবা আইনি অভিভাবকের নাম ব্যবহার করে লেখাপড়া থেকে শুরু করে জন্মনিবন্ধন কিংবা পাসপোর্ট সবকিছুই করা যাবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিতৃপরিচয় ছাড়া সন্তানের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ধর্ষণের শিকার নারীর সন্তান, সম্পর্কেচ্ছেদ করে পিতা চলে গেলে সিংগেল মায়ের সন্তান, যৌনপল্লিতে জন্মগ্রহণ করা সন্তান, রাস্তায় ঘোরাফেরা করা মানসিক ভারাসম্যহীন নারীর সন্তানের হিসাব করলে তালিকাটা বেশ দীর্ঘই হবে। এই পিতৃপরিচয়হীন সন্তানদের প্রত্যেকের শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন শুধু মা কিংবা আইনি অভিভাবকের নাম উল্লেখ করেও পড়াশোনা করানো সম্ভব।
যে পুরুষের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ থাকে না স্ত্রী-সন্তানের প্রতি, তার পরিচয়ে সন্তান কেন পরিচিতি পাবে? একজন মা তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। প্রসব বেদনায় ভোগে। মা একাই সন্তানকে কোলেপিঠে নিয়ে মানুষ করেন। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্য বাবার পরিচয়ই বড় হয়ে উঠেছিল।
যৌনপল্লির একজন মা তার সন্তানের পরিচয় কিভাবে দেবেন? কে নেবে এই সন্তানের দায়ভার? তাই বলে ওই সন্তান পড়াশোনা করবে না? বাংলাদেশে এমন অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা তাদের বাবার পরিচয় জানে না। অনেক মেয়ে আছে, যাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আবার অনেক মা আছেন, বাবার পরিচয় দিতে পারবেন না ভেবে সন্তানকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে রাস্তায় কিংবা পরিত্যক্ত ড্রেনে ফেলে রেখে যান। ওই শিশু কারও মাধ্যমে বেঁচে ফিরতে পারলে পড়াশোনা করার জন্য একজন অভিভাবকের প্রয়োজন পড়ে। অনেক সময় পরিচয় দিতে না পারা বাচ্চারা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগে। একজন আইনি অভিভাবকের মাধ্যমে ওই বাচ্চারা যদি তাদের নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারে, তাহলে দেশ ও দশের কল্যাণ হবে। অনেক শিশু মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে পারবে। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এমন সন্তান অহরহ আছে।
বাংলাদেশে এই যুগান্তকারী আইন বদলে দেবে হার না মানা ওইসব মায়ের জীবন। তারা এখন সন্তানের অভিভাবক হিসেবে নিজেদের নাম ব্যবহার করতে পারবেন। আদালতের এই যুগান্তকারী রায়ের ফলে সমাজের ট্যাবু ভেঙে গেলো।