Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদান: মানবহিতৈষী কর্ম এগিয়ে যাক

কিছু বছর আগেও মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদান ব্যাপারটা মানুষের কাছে অজানা ছিল৷ এখনো প্রত্যাঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণাটাই নারী-পুরুষ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে কারও নেই। প্রত্যাঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়ে বাংলাদেশে যে আইন আছে, সেটাই বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজানা। বলতে বাধা নেই যে তৃণমূল স্তর থেকে অনেক উচ্চ শ্রেণিতেওপ্রত্যাঙ্গদান নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে৷

কিন্তু ১৮ জানুয়ারির পর থেকে আমাদের দেশের মানুষ পরিচিত ‘মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদান’ শব্দদুটির সঙ্গে। নেপথ্যে রয়েছেন ২০ বছর বয়সী এক তরুণী। নাম সারাহ ইসলাম। ১০ মাস বয়স থেকেই যিনি লড়ে যাচ্ছেন টিউবেরাস স্কলেরোসিস নামক রোগের সঙ্গে। সম্প্রতি সারাহ’র মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মা শবনম সুলতানা মেয়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েপ্রত্যাঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সারাহর দুটি কিডনি দুজন মানুষের দেহে সংযোজন করা হয়েছে। আর তাঁর দুটি কর্নিয়া আরও দুজন মানুষের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজেরপ্রত্যাঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন।

একটা সময় ছিল যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান অতটা উন্নত ছিল না। কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানও। দুরারোগ্য সব রোগের চিকিৎসাও এখন সহজ। ‘মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদান’-র অস্ত্রপাচার প্রক্রিয়াও জটিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এ বিষয়ে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে এরকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। সারাহ ইসলামের মানবহিতৈষী সিদ্ধান্তে ৪ জন ব্যক্তি পেয়েছেন বাঁচার আশা। আর এই বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইতিবাচক একটি দিক। একজন ব্যক্তির দানকৃতপ্রত্যাঙ্গ দিয়ে ৮ জন মানুষ বাঁচতে পারে নতুন করে।

ধর্মীয় বিধিনিষেধ থেকে অনেকেই এই মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদানে এগিয়ে আসেন না। কিন্তু সুযোগ থাকার পরও মানুষের উপকারে এগিয়ে না আসা কোন ধর্মে লেখা আছে তা দেখাতে বললে হয়তো মোল্লা-পুরোহিতরা ক্ষেপে যাবেন। কিন্তু মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদানের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে যৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত। একজন আইসিইউতে মৃত্যুর প্রহর গুনছে আর আরেকজন শুধু একটি প্রত্যাঙ্গ বিকল হওয়ায় বেঁচে থাকার ইচ্ছা থাকার পরও বিফল হচ্ছে।

বাংলাদেশে অনেক রোগীই শুধু একটি প্রত্যাঙ্গ বিকলের কারণে মারা যাচ্ছেন। সময়মতো ডাক্তাররা একজন দাতা পান না। বাংলাদেশে এখনও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ সেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার জানেন না। অনেকাংশেই তাদের মধ্যে থাকে সচেতনতার অভাব। রক্তদান নিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ক্যাম্পেইন করা হলেও মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদান নিয়ে তেমন একটা সরব হতে দেখা যায় না কাউকেই। তবে মরণোত্তর প্রত্যাঙ্গদানে সবার এগিয়ে আসা জরুরি। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মকে। কারণ তাদের হাতেই রয়েছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ