Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৭তম স্ত্রী হত্যা: পুরুষের লালসা ও বিকৃতি বন্ধ হোক

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর দেখে যে কারও চোখ কপালে উঠবে। এক ব্যক্তির ১৭তম স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন তার ১৮তম স্ত্রী তাছকিরা বেগম। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক এম আলী আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন। তবে আসামি আবু সাঈদ এখনো পলাতক।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার অনন্তরামপুর গ্রামের তাজিম উদ্দিনের মেয়ে তানজিনা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার পালগঢ় গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে আবু সাঈদের বিয়ে হয়। তানজিনা ছিলেন আবু সাঈদের ১৭তম স্ত্রী। পরে আবু সাঈদ তাছকিরা বেগম নামে আরও এক নারীকে বিয়ে করেন। ২০০৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ১৫ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে আবু সাঈদ তার নববিবাহিত স্ত্রী তাছকিরার সহযোগিতায় তানজিনাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ পাশের ধানক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা করেন তানজিনার বাবা তাজিম উদ্দিন।

একই বছরের ১৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক। ৩০ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ সালের ২৬ জুলাই জামিন পেয়ে কিছুদিন আদালতে হাজিরা দিয়ে ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে পলাতক আছেন আবু সাঈদ। অপরদিকে তাছকিরা বেগম ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিন পেয়ে ২০১৪ সালের ১৮ মে থেকে পলাতক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি তাজিবুর রহমান লাইজু এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘অভিযুক্ত আবু সাঈদ যৌতুকের লোভে একের পর এক বিয়ে করছিলেন। তানজিনাকে বিয়ের সময় ২৫ হাজার টাকা যৌতুকের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দেন তার বাবা। বাকি ১৫ হাজার টাকার দাবিতে তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।’

পরে বিচারক আবু সাঈদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। চমকিত হতে হয় যে, নারীরা আজও পণ্যের মতো বিকোচ্ছে। অপরাধ করে তবে সেই অপরাধীকে অপরাধ করতে সহযোগিতা করে এ সমাজেরই লোকজন। যেই ব্যক্তি এর আগেও ১৭ টা বিয়ে করে ফেলেছেন, তারসঙ্গে নতুন করে কিভাবে নারীরা সংসার পেতেছেন বা সংসার করতে চেষ্টা করেছেন? আজকের যুগেও নারীরা এতটা সস্তা কিভাবে! ফলে এই ঘটনা পর্যালোচনা করে পুরুষটির অপরাধের জন্য তাকে যতটা ধিক্কার এবং শাস্তি দেওয়া উচিত ঠিক ততটাই এ সমাজ এবং এই নারীদের পরিবারকে শাস্তির আওতায় আানা উচিত।তাদের পরিবার মেয়েকে কোনরকমে কারো হাতে তুলে দিতে পারলেই নিশ্চিত হয় কিভাবে।

হত্যা বা আত্মহত্যা করার পর তাদের সরল স্বীকারোক্তি কতটা ভণ্ডামি এবং হাস্যকর তা বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রই বোঝে। এই ধরনের পুরুষতান্ত্রিক হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সমাজে যতদিন থাকবে নারী ততদিন পণ্যই হবে। তবে সবচেয়ে প্রথমে যাদের নিজেদের মূল্য দেওয়া উচিত তারা আর কেউ না, এই নারী সমাজ। নারীরা যদি অন্যায়কে রুখতে এগিয়ে না আসে তবে এ ধরনের অপরাধ বারবার সংঘটিত হবে। এই মামলায় যে ঘটনাগুলো সামনে এসেছো সবটাই অপরাধ অভিযুক্ত। যৌতুক দেওয়া- নেওয়া অপরাধ হলেও আজও অনেক পরিবারে হরহামেশাই এর প্রচলন রয়েছে।

বিশেষত গ্রাম-অঞ্চলে দরিদ্র বাবা-মা তাদের কন্যা সন্তানকে নিজের শেষ স্মবলটুকু দিয়ে পাত্রস্থ করেন। তবে এই অপরাধ করতে গিয়ে তারা জন্ম দেন আরও অপরাধের। কারণ এতে করে যে বা যারা যৌতুক নিচ্ছে তাদের লোভ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। ফলে যখন পরবর্তীকালে এটা অপূরণীয় থাকে তখনই নিরকযাতন বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষের কাছে যতদিন বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা না আসবে ততদিন নারী নির্যাতন কমে আসবে না।

তাই যাতে এসব সমস্যা সৃষ্টি না হতে পারে সেলক্ষ্যে নারীদেরই সচেতন হতে হবে। নারীরা যদি সচেতন না হন তবে আবু সাঈদদের থামানো আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়!

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ