Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৃশংসতা ঠেকাতে নারীকেই সোচ্চার হতে হবে

নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় বারবার কথা বলা হলেও আজও কোথাও নারীকে নিরাপদ করে তোলা যায়নি। আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের চিত্র তো রয়েছেই। তবে বহির্বিশ্বের দিকে তাকালে আরও অধিকতর আতঙ্কিত হতে হয়! যদি তুলনা করতে হয়, তবে গুটিকয়েক বিষয় বাদ দিলে দেশের নারীরা কিঞ্চিৎ ভালো অবস্থানে আছে৷ এই তুলনা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের সঙ্গেই করা হচ্ছে।

আফগানিস্তানের নারীরা অবরুদ্ধ। তাদের ঘরের বাইরে বের হওয়ার ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। চাকরি, স্কুল, কলেজ, বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ার ওপরও রয়েছে কঠিন বিধিনিষেধ। অন্যদিকে পাকিস্তানেও নারীরা তাদের মর্যাদা থেকে খসিত। সব নারীদের জন্য পড়ালেখা আজও নিশ্চিত করা যায়নি! আবার ইরানের মতো মুসলিমপ্রধান দেশেও রয়েছে নারীদের প্রতি চরম অবমাননা। তারা অনার কিলিং (সম্মান- মর্যাদা রক্ষার নামে কন্যা সন্তানকে হত্যা) করে। ঘটনাগুলো দেখলে বা বিশ্লেষণ করলে শুধু এটাই বলতে হয়, নারীরা আজও কেন নিরাপদ নয়? নারীদের কেনই বা এভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বলি হতে হবে আজও!

বহির্বিশ্বের দিকে মুখ ফেরালে আরও আতঙ্কিত হতে হয় তাদের নির্মম, নিষ্ঠুর, বিভৎস ভয়াবহতা লক্ষ করলে। যারা ইসলামের ইতিহাস জানেন, তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের কথা। সে যুগে কন্যাসন্তানকে হত্যা করা হতো নিষ্ঠুরভাবে। তবে মুসলমানদের শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর আর্বিভাবের পর একসময় এই বর্বরতা বন্ধ হতে থাকে। নারীদের তিনি সর্বোচ্চ স্থানে বসিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্বয়ং হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়বারের মতো মায়ের স্থান স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ নারীকে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মীয় এই উদাহরণকে সামনে এনে আমি এটাই বলতে চাই, আজকের যুগে যারা সর্বত্র নিজেদের খুব বেশি ধর্মপ্রাণ বলে প্রচার করেন, তারা নারীর এই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন নয় কেন?

নিজেদের প্রাপ্যটা পেতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবসময় মনগড়া ফতোয়া জুড়তে ব্যস্ত। যদি তাই হয় তাহলে ইসলাম বা ধর্মের আবরণ ব্যবহার করা কেন! এমন প্রতারণা করে কী ফায়দা? নারীকে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে না পারলে নারীকে নিয়ে মাথা ঘামানোও উচিত নয়। প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র চিন্তাচেতনার ধারক-বাহক। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে নরক সদৃশ করে তুলতে পুরুষতন্ত্রের জুড়ি নেই। দেশের ভেতরে এবং বাইরে নারীরা আজও নিরাপদ নয়।

এবার আসা যাক প্রকৃত ঘটনায়, গত বছর ইরানে ‘অনার কিলিং’–এর ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছিল। দেশটির আহভাজ শহরে স্ত্রী মোনার বিচ্ছিন্ন মস্তক নিয়ে স্বামী সাজ্জাদ হায়দারি নামের এক ব্যক্তির ছবি প্রকাশিত হয়। ১৭ বছর বয়সী স্ত্রীর শিরশ্ছেদ ও বিচ্ছিন্ন মাথা নিয়ে ঘোরার দায়ে মাত্র ৮ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে স্বামীর। ইরানের বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। এটি আলোচিত ঘটনা হলেও ইরানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। একইসঙ্গে আরও একটি নৃশংসতার বর্ণনা দেওয়া হলো, ২০২০ সালে ১৪ বছরের রোমিনা আশরাফির শিরশ্ছেদ করেন তাঁর বাবা। প্রেমিকের সঙ্গে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়। শিরশ্ছেদ করার আগে রোমিনার বাবা এই অপরাধের জন্য কী শাস্তি হতে পারে, তা নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করেন। আইন অনুসারে ওই বাবার ৯ বছরের কারাদণ্ড হয়। ইরানের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির যে বিধান রয়েছে, তা থেকে এটি এক বছর কম। ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করেও কি নারীরা কোনোই সুরাহা পেয়েছে?

ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের পর গৃহে সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে ইরানে। বিয়ের জন্য বয়স নির্দিষ্ট করে দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। ইরানে মেয়েদের বিয়ের জন্য ১৩ বছর নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর চেয়ে কম বয়সী মেয়েরা বিচারিক ও মা-বাবার সম্মতিতে বিয়ে করতে পারে।

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মায়েশা আমিনি নামের এক নারী হিজাব ঠিকমতো না পরার অপরাধে ইরানের পুলিশ সেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ঘটনাগুলো গায়ে এতটাই কাঁটা দেয় যে, এ পৃথিবীতে নারীদের থাকা যে উচিত নয় বা নারীরা অস্পৃশ্য সেটাই মনে করিয়ে দেয়। যদিও পুরুষ ও নারীর সম্মিলিত জীবনযাপনেই টিকে আছে বিশ্ব। তবু নারীর প্রতি এমন বিভৎসতা, নৃশংসতা বারবার হৃদয়কে বেদনার্ত করে তোলে৷ নারী হয়ে জন্মানোর কারণে নারীকে এত তুচ্ছভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সম্মান-মর্যাদা-ধর্মরক্ষা কি এত সস্তা? আর একজন মানুষকে হত্যা করে যে সত্যি ধর্মরক্ষা হয়, সম্মান রক্ষা হচ্ছে এই হিংস্র মানসিকতা কেমন করে আসে? এমন বিকৃত মানসিকতার কি সত্যি কোনদিনই পরিবর্তন হবে না!

সমাজ থেকে চিরতরে কলুষতা দূর করতে, মানসিক হীনতা, দৈন্য দূর করতে পৃথিবীর নারীদের একাত্ম হতে হবে। নারী জাতি যদি নিজেদের অধিকার রক্ষায় একে অপরের পাশে না দাঁড়ায়, সঙ্গী না হয় তবে এই হিংস্র আচরণ চলতেই থাকবে। বিশ্বজুড়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে গ্লোবালি নারীদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। নিজেদের প্রতি শোষণকে থামাতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে। তাই বিশ্বজুড়ে নারীর সম্মান-মর্যদা বাড়াতে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ