‘সুস্থ জাতি তৈরি করতে খেলার মাঠের বিকল্প নেই’
ঢাকার মিরপুরে একটি খেলার মাঠ জবরদখল থেকে উদ্ধারের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, `সুস্থ সমাজ গড়তে হলে অবশ্যই আমাদের উন্মুক্ত স্থান রাখতে হবে। পাবলিক স্পেস রাখতে হবে। ঢাকা শহরে কিন্তু পাবলিক স্পেস নেই। সব দখল হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো ছিল সেগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন চেষ্টা করছে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘নতুন ড্যাপ সরকার যেটা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন, রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর গেজেট হয়েছে। গেজেটের মধ্যে এটা উন্মুক্ত স্থান। যেখানে উন্মুক্ত স্থান, উন্মুক্ত খেলার মাঠ এখানে কিভাবে কে বা কারা কাদের জোরে এখানে তারা বিল্ডিং করবে এটা জনগণও দেখতে চায়। আমরা দেখতে চাই ড্যাপের ভিতরে কোন কোন জায়গাগুলো আছে যেটা উন্মুক্ত জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা। ড্যাপে ভেতরে যে জায়গাগুলো উন্মুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা থাকবে সেই জায়গাগুলো অবশ্যই ডিএনসিসি উন্মুক্ত করে ফেলবে।’
আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎকে যদি গড়তে হয় সুস্থ সমাজ, সুস্থ ওয়ার্ড, সুস্থ শহর গড়তে গেলে আমাদের খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নাই। শিশুদেরকে নিয়ে এখানে ফুটবল-ক্রিকেটসহ সব খেলা খেলবে। আজকে আমরা মেয়েদের বা ছেলেদের বলি, মেয়েরা কিন্তু ফুটবলে সাফ জয় করে এসেছে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। আমাদের ছেলেরা বলছে আমাদেরকে আরও বেশি মাঠ দেওয়া হোক। শিশুরা বলছে মাঠ দেওয়া হোক। একটা সুস্থ জাতি যদি তৈরি করতে হয় তাহলে খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নাই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা। খেলাধুলা এবং পড়াশোনার দুটি কিন্তু একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। তোমরা শুধু পড়াশোনা করবে, খেলাধুলা করবে না, সেটা কিন্তু হবে না।’
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে একটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪৫,০০০ জনসংখ্যার ঘনত্ববিশিষ্ট এ শহরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত পরিসরের অভাব রয়েছে। পার্ক এবং খেলার মাঠ পুনঃনকশা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থানগুলির সংরক্ষণ এবং সঠিক ব্যবহার শহরটিকে টেকসই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১8টি পার্ক ১৪টি খেলার মাঠকে পুনরুজ্জীবিত ও যুগোপযোগী নকশা প্রণয়নের সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খেলার মাঠের নকশা প্রণয়ন পরামর্শক হিসেবে যুক্ত হয়েছে। নির্মাণ পর্যায়ের শুরু থেকেই জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উক্ত পার্কগুলির নকশা করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তিনটি কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে; (ক) ব্যবহারকারীদের সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে জনমত জরিপ, (খ) সক্রিয় গ্রুপ সেশনের মাধ্যমে পার্কসংলগ্ন এলাকাবাসীদের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক দ্রুত মূল্যায়নসভা (পিআরএ) পদ্ধতি, এবং (গ )মাইন্ডক্রাফ্ট গেমিং সফ্টওয়্যার এর ব্যবহার, যার সাহায্যে শিশুরা পার্কগুলোর ধারণামূলক নকশা প্রস্তুত করেছে। প্রাপ্ত সকল ফলাফল বিশ্লেষণ করে একটি অগ্রাধিকার তালিকার সারণী গঠন করা হয়েছে যেখানে জনসাধারণের চাহিদার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে জনসাধারণের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করে প্রকল্প আওতাভুক্ত সকল পার্ক এবং খেলার মাঠের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। কীভাবে জনগণের সর্বজনীন অংশগ্রহণ প্রকল্পকে সমৃদ্ধ করে এবং কীভাবে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নানান প্রজন্মের পার্ক এবং খেলার মাঠ ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে বহু-কার্যকরীজন পরিসর তৈরি করা যায় তা উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ভিত্তি ওডিএনসিসি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই, সমৃদ্ধ, সুপরিকল্পিত এবং সুবিধাজনক গণপরিসরের একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রকল্পের বর্ণনা
নগরবাসীর সামাজিক ও সংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বসবাস উপযোগী, কার্যকর ও টেকসই অবকাঠামো বিনির্মাণের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালে গ্রহণ করা হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মূল ব্যয় ২৭৯.৫০ কোটি টাকা ছিল; যার সংশোধিতব্যয় ২০২.০৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জুন/২০২২ খ্রিঃ তারিখে সমাপ্তিরজন্য নির্ধারিত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় (ক) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন (খ) ২৩টি বিদ্যমান পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন; স্বাস্থ্যসম্মত ও ব্যবহার উপযোগী নতুন ৫০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ (গ) পর্যাপ্ত খোলা এবং সবুজস্থান রেখে ২টি কবরস্থান উন্নয়নসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১৩ টি পার্ক ও ৩টি খেলারমাঠ এবং ৩৩টি পাবলিক টয়লেটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
অনন্যা/এআই