Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান নারীদের অধিকার রক্ষায় সফল হোক জাতিসংঘ

সতেরো মাস আগে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই তালেবান সরকার নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছে। লিঙ্গবৈষম্যের কারণে তালেবান নারীরা সরকারি চাকরির বাইরে অবস্থান করছে। এছাড়া, শিক্ষাক্ষেত্রেও তাদের ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি নারীদের জন্য পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা।

নারী ও বালিকাদের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা শুধু লিঙ্গবৈষম্যই নয় বরং একইসঙ্গে নারীকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার পাঁয়তারাও বটে। আবার ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে তালেবান সরকার আফগান নারীদের বিভিন্ন এনজিও’তে কাজ করা নিষিদ্ধ করে। এর ফলে বিভিন্ন সংগঠন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে এসব বেসরকারি সংগঠনের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠান তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর আংশিকভাবে তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে।

তালেবান সরকারের এমন কর্মকাণ্ড বিশ্বের নজর কেড়েছে। এ ব্যাপারে বহির্বিশ্বে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তবু তালেবান সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। নারীদের প্রতি তাদের এমন বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব দেশ এবং দেশের বাইরে নারী অবমাননার স্বরূপ তুলে ধরছে৷ নারীদের তুচ্ছ বস্তুসর্বস্ব জীবে পরিণত করেছে।

তবে আশার কথা এই যে, জাতিসংঘের সিনিয়র কর্মকর্তারা তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছেছেন। তালেবানের ‘লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য’ সৃষ্টি প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করার পর তারা এ সফরে গেলেন।

সোমবার কাবুলে পৌঁছানো জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি দলে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মাদ ও জাতিসংঘ নারী নির্বাহী সম্পাদক সিমা বাহুস রয়েছেন। নিরাপত্তা জনিত কারণে তারা অনেককিছুই গোপন রেখেছেন। তবে তালেবান নারীদের প্রতি এমন অহিংস আচরণ মনুষ্যত্ব ও বিবেকের প্রশ্ন তোলে! যেখানে বহির্বিশ্বের সবকিছুই তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সেখানে নারীর প্রতি এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত মানবজাতির জন্য বড় বাধা। যে জাতি নারীকে মূল্যায়ন করতে পারে না সে জাতির ধ্বংস অনিবার্য। কারণ নারী-পুরুষ উভয় মিলেই কিন্তু এই পৃথিবীর ভারসম্য রক্ষিত হয়। ফলে নারী যখন সর্বত্র একপেশে হতে থাকবে তখন নারীদের পক্ষ থেকে কিছু বিরূপ সিদ্ধান্ত বা সমস্যা সৃষ্টি হবে। যা দেশটির জন্য কখনই কাম্য নয়। ফলে তালেবান নারীদের অধিকার রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

জাতিসংঘের এই বৈঠক কতটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে জাতিসংঘের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংশনীয়। কোন দেশের নারীরা যদি এমন করে অবহেলা, বঞ্চনার শিকার হতেই থাকে তবে তালেবান জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মও মেধার দিক থেকে বিকল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ নেপোলিয়নের সেই একটি কথায় জাতির ভবিষ্যৎ নিরূপণে সহায়ক। আসলেই তো ঠিক তা-ই।

যদি মা অর্থাৎ নারীর মধ্যে শিক্ষার আলো না পৌঁছায় তবে তার সন্তানরাও আলোকিত হবে না। আর সন্তানদের জ্ঞানের অভাব হওয়া মানেই জাতি হিসেবে পথকে আরও সংকুচিত করে ফেলা। তবে দেশের গণ্ডিতে তাদের অন্যায়- অত্যাচার বা নিষ্ঠুর আচরণ মানবজাতির বৃহত্তর অর্থে ক্ষতির সম্মুখীন করে তুলবে। আমরা জানি, এশিয়ার দেশগুলো আজপ উন্নত হয়ে উঠতে পারেনি যেমনটা ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো। তারওপর যদি নারীর প্রতি এমন বিরূপ আচরণ করা হয় বারংবার তবে সত্যিকার অর্থে এই উপমহাদেশের দাসত্ব কোনদিন ঘুচবে না।

বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়কে টেনে এনে বা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিপথে পরিচালিত করা বড় ধরনের ক্রাইম। তবে প্রত্যেক দেশের ভূখণ্ডে তার নিজস্ব কিছু নীতিমালা থাকেই। কিন্তু সেই নীতিমালা কতটা সহিংস বা অহিংস সেটাও বিবেচ্য বিষয়। হিটলারের নাৎসি বাহিনী গ্যাস চেম্বার সৃষ্টি করে সেখানে ইহুদিদের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। পরবর্তীকালে হিটলারের নিজেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। অন্যয়-অত্যাচার সাময়িক সময়ের জন্য।

পৃথিবীর কোনোকিছুই স্থায়ী নয়। তবে এই ক্ষণস্থায়ী সময়ের সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংস করতে সহায়ক৷ এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং জঘন্যতম ঘটনা হলো ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ। যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসাবে খচিত হয়ে আছে। কেন, কিভাবে ঘটনাগুলো আজকে চাপা পড়লেও জাতি আজও ভুক্তভোগী!

৭৭ বছর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষের দিকে তখন এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। ফলে বলাই চলে, কোন অন্যায়, অত্যাচার সেটা তখনকার জন্য সাময়িক হলেও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ক্ষতসৃষ্টিকারী। ফলে তালেবান সরকার আজ যে, ঘটনাগুলোকে জীবন্ত করে রাখছে এরফলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

পার্শ্ববর্তী দেশের উন্নয়ন, উন্নতি যত দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে তারা ঠিক ততটাই তলিয়ে যেতে থাকবে। ফলে নারীদের উন্নয়ন, নারীদের মর্যাদা দান কোন তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ব্যাপার নয়। সে যেকোনো দেশের সীমানায় সত্য, চিরস্থায়ী। ফলে নারীকে জাগতে হবে। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের উদ্যোগ আশাকরি সুফল বয়ে আনবে। তালেবান নারীরা পূর্বের তুলনায় স্বাধীন জীবসত্তাকেই ফিরে পাবে!

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ