Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজও পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা: বন্ধ হোক পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা

‘কাদু বিবি বলে আল্লা এট্টা বিটা দে
কামায় খাওয়ার সাদ নেই আমার
মলি মাটি দেবে কে!’

গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত এই প্রবাদের ধারক-বাহক পুরুষতন্ত্র। দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বসবাস করে। ফলে সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে,
আমাদের সমাজের অধিকাংশই বাবা-মাই আজও কন্যা সন্তান চান না। বাবা-মায়ের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা পুত্রসন্তান। সেই ছেলে হয়ে ওঠে বাবা- মায়ের সম্বল। মৃত্যু হলে তাদের হাতে একমুঠো মাটি পাওয়ার কামনা। বুড়ো বয়সের একমাত্র লাঠি! ফলে ছেলে সন্তানের জন্য যেমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পরিবারের সদস্যদের থাকে, মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টোটা হয়।

একটি পরিবারে একাধিক ছেলে সন্তান হলেও কারও আপত্তি থাকে না। তবে ওই একই গোষ্ঠীতে বা কারও যদি একাধিক কন্যাসন্তান হয়, তবে প্রতিনিয়ত পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের করুণা ধ্বনিত হয় বাবা-মায়ের ভবিষ্যতের প্রতি। আজও পরিবার-সমাজ আবহমান ধারণা বহন করেই চলেছে। ছেলে সন্তান বুড়ো বয়সে বাবা-মাকে দেখভাল করবে কিন্তু মেয়ে হলে একটা বয়সের পর সে পরের ঘরে চলে যাবে। পিতা-মাতার কোনো দায়-দায়িত্ব মেয়ে সন্তান পালন করতে অপারগ, এমন ধ্যান-ধারণা থেকেই পুত্রের জন্য আজও যতটা হাহাকার ধ্বনিত হয়, কন্যার জন্য ততটা কোনোভাবেই নয়।

আমাদের পরিবারগুলোতে যেহেতু কন্যা সন্তানকে আজও স্থান দেওয়া হয়নি সেখানে সমাজ, রাষ্ট্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হবে এটা নতুন কিছু নয়। কারণ পরিবারের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনায় প্রতিফলিত হয় অধিকাংশের মগজে। পুরুষতান্ত্রিক এই মনোভাব এমনভাবে আজও সমাজে গেঁথে আছে যে, কন্যাশিশু জন্ম নেওয়ার পরপরই তার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে হবে।

শুধু লিঙ্গজনিত কারণে একজনকে অধিক ক্ষমাতাশীল, জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ সব তকমায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১ বা ২ সন্তানের চাহিদা থাকে পরিবারের। তবে এক্ষেত্রে ২টিই যদি কন্যা সন্তান হয়, তবে অধিকাংশ পরিবারের তৃতীয় সন্তান কামনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য একটিই- পুত্র সন্তান। বংশের প্রদীপ। উত্তরাধিকার রক্ষার দায়। আরও হাজারো মন্তব্য পুত্রের জনক-জননীর জন্য। পরিবার রক্ষায়। কিন্তু সেই একই স্থানে কন্যা সন্তান যেন জলে ভাসা পদ্ম। স্রোতের সঙ্গে মেয়েদের গতি পাল্টাবে। ফলে কন্যার দায় পরিবারের নেই।

আধুনিক-ডিজিটাল-ইন্টারনেটভিত্তিক-যান্ত্রিক যুগ ও তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও কন্যা সন্তান সওদার বিষয়। কন্যা সন্তানের কপালে দুর্ভাগ্যের যে রেখা পরিবার-সমাজ পরিয়ে দেয় আজন্ম সেই দাগ মোছে না। স্রোতে ভেসে যে তরীতে যেমন স্থান পায় সেটুকুতেই সংকুলান করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আজও। এই হতভাগ্য নারীদের সঙ্গে তাই প্রহসনের পর প্রহসন।

আশ্চর্য হতে হয় সবচেয়ে বেশি যখন ভাবতে হয়, এই মায়ের জাত নিজেই নিজেদের মূল্য নিশ্চিত করতে পারে না! নিজে নারী হলেও কোলের সন্তানটি যেন ছেলে হয়, সেই কামনায় দিবানিশি তাদের মনোজগতের বাসনাকে অন্ধকার করে তোলে! ফলে যেই নারী নিজে অবহেলিত, সেই আবার তার কন্যা সন্তানকেও অবহেলার শিকার করে তোলে।

এই হীন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হলে সত্যিকার অর্থে নারীদের নিজেদের মানসিকতা বদলাতে হবে। তারা নিজেরা যে অবহেলা বঞ্চনার শিকার, সেই একই প্রহসন যেন তার নিজের সন্তানের সঙ্গেও না ঘটে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারীরাই পারে পৃথিবীর মানসিকতার বুকে পদাঘাত করতে। একটি সুস্থ সন্তান কামনা করতে। সে ছেলে হোক বা মেয়ে। পৃথিবীর যোগ্য উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে দরকার সুস্থ মন, সুন্দর পরিবেশ।

মনের কলুষতা দূর করে সুস্থ প্রজন্ম উপহার দেওয়া হোক প্রত্যেক মানুষের সেটাই একান্ত কামনা হওয়া উচিত। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদৌলতে কন্যা সন্তানকে তুচ্ছ করে দেখা নয়। ছেলে হোক বা মেয়ে পরিবার; সমাজের জন্য সমান। তাই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যদি মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে তবেই পৃথিবী বদলে যাবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ