Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কাঁটা স্মার্টফোন!

মানুষ বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে স্বীকার করতে গিয়ে বর্তমান সময়ে প্রচণ্ড পরিমাণে তথ্য-প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার ফলে জীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব যতটা পড়েছে, ঠিক ততটাই নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই হলো, যার প্রতি বিধিনিষেধ থাকে, সেদিকে ঝুঁকতেই বেশি আগ্রহী।

ইন্টারনেটের অপার সুযোগ মানুষের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই বিষ বলেই গণ্য হয়। তাই স্মার্টফোনের অবাধ ব্যবহারও মানুষকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক। সম্প্রতি ভারতে চালানো একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য! স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপর স্মার্টফোনের প্রভাব কতটা, এ নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো। ভারতের সাইবার মিডিয়া রিসার্চও এর সঙ্গে যুক্ত। দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দরাবাদসহ দেশটির বড় বড় শহরে এই সমীক্ষা চালানো হয়।

এসব এলাকার এক হাজারের বেশি দম্পতিকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করে জবাব নেওয়া হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ স্বামী বা স্ত্রীর মত হলো, স্মার্টফোন চালানো অবস্থায় কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা বিরক্ত হন। এই ফোনের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন ৬৬ ভাগ উত্তরদাতা।

আবার অনেক দম্পতি বলছেন, যখন তারা বিশ্রাম করেন, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফোন। ৭০ শতাংশ দম্পতি বলেছেন, এতে কমেছে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিমাণও। ৬৯ ভাগ বলেছেন, দাম্পত্য সম্পর্ক ব্যাহত হচ্ছে। অবশ্য ৮৪ ভাগ বলেছেন, তারা তাদের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চান। ফোনে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন ৮৮ ভাগ। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে চান ৯০ ভাগ মানুষ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে নিকট সম্পর্কে দূরত্ব বেড়েছে। তবে ফোনের মাধ্যমে পাওয়া বন্ধু মহলে সম্পর্ক উন্নয়নে যতটা সচল পরিবারের ক্ষেত্রে ততটা নয়। তাই ধীরে ধীরে কাছের সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে পড়ছে। ভারতের সমীক্ষাটি সারা বিশ্বের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য তবে অন্নুনত বা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন নয়। এর ফলে নানারকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর হয় একসঙ্গে সময় অতিবাহিত করলে। একজন অন্যজনের প্রতি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাটানো সময়ের অধিকটা ব্যয় করেন ফোন। আর এই ফোনই তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে।

সময়ের আবর্তে প্রযুক্তির উৎকর্ষ মানব জীবনে যে পারিবর্তন এনেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিনতম সত্য সম্পর্কে শিথিলতা। তবে বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর দুর্বল সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার নেপথ্যে প্রধান কারণ স্মার্টফোন। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ছাড়া সম্প্রতি কোন মানুষ টিকে থাকতে পারে এটাই যেন এক মহা বিস্ময়! হাতের ছোট্ট ডিভাইসটি মানুষকে কাছে টানার চেয়ে দূরে ঠেলেছে বেশি৷ ফোনের সাহায্যে গান, মুভি, চ্যাট, ইউটিউবে নানারকম অ্যাপস ব্যবহার, গেইম প্রভৃতিতে মানুষ এতটাই ব্যস্ত রাখে নিজেকে যার ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে সে সম্পর্কে ক’জন ওয়াকিবহাল!

ভারতের সমীক্ষা হলেও গবেষণার রিপোর্ট আমাদের দেশেও সমান বা কিছু বেশিই সক্রিয় হবে। এর ফল এতটাই নেতিবাচক যে, জীবনে হাজার রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে স্মার্টফোনের জুড়ি নেই। বাড়তি সময় ক্ষেপনের পাশাপাশি সম্পর্কে অবনতি সবই ঘটে থাকে। সম্প্রতি এত ডিভোর্সের পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও অন্তর্হিত। স্মার্টফোনের পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। একজন অপরজনকে অবজ্ঞা, অবহেলা করছে।

সংসারের সুখ-শান্তি বজায় রাখতে সবসময় সম্পর্কের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। পৃথিবীর সবকিছুই যত্নে মেলে। সময়ের সঙ্গে সবকিছু পাল্টাছে। তবে পাল্টে যাওয়া পৃথিবীর বুকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের উন্নয়নে নিকটকে দূরের করে তোলা যাবে না। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রকৃত মানুষের কাজ। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ অতীব জরুরি। নারী-পুরুষ উভয়কেই তাদের কাছের মানুষকে সময় দিতে হবে। অর্থনীতির ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

প্রায়োরিটি লিস্টে কোনটা সবচেয়ে জরুরি সেটা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। জীবনে সবকিছু জরুরি তবে সেটার মধ্যে অতীব জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সচেতন না হলে জীবন তলানিতে গিয়ে ঠেকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নে স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবারের প্রতি মনোযোগী হওয়া অবিসম্ভাবী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ