বিচ্ছেদ হলেই আত্মহত্যা নয়, ঘুরে দাঁড়াও
সম্প্রতি নারীদের মধ্যে এক ধরনের ট্রেন্ড প্রচলিত হয়ে গেছে। বিচ্ছেদ হলেই তারা প্রথমত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই বিচ্ছেদ প্রেম ঘটিত হোক বা দাম্পত্য জনিত হোক। নারীদের মধ্যে এই মানসিকতা সত্যিকার অর্থে জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এমন কিছু নারী এই পথ বেছে নিচ্ছেন, যেন সাধারণ নারীরা বরং উৎসাহিত হচ্ছেন বলা চলে। এখন কথা হলো, বিচ্ছেদ হলেই কেন নারীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে? নারীরা কেন এ ধরনের পথ বেছে নিচ্ছে? এমনও অনেক নারী আত্মহত্যা করেছেন, যারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন না। শুধু বিচ্ছেদের কারণে আত্মহত্যার পথে বেছে নিয়েছেন। তবে, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য শুধু বিচ্ছেদই কি দায়ী?
চলতি বছরেই (২০২২) ছোটপর্দা, বড় পর্দার মিলিয়ে কয়েকজন অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, এর বেশিরভাগই বিচ্ছেদ ও ডিপ্রেশনের কারণে। গত ২৫ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করেছেন তুনিশা শর্মা। তিনি একটি টিভি অনুষ্ঠানের শুটিং সেটে আত্মহত্যা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে টেলিভিশন অভিনেত্রী বৈশালী ঠক্করও আত্মহত্যা করেন। অভিনেত্রীই শুধু নয়, সাধারণ নারীদের অনেকে এই পথ বেছে নিচ্ছেন। যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। কারণ কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তবু এমন মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। যার ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়। একধরনের বিষাদের কালো ছায়া দেখা দেয়।
প্রেম বা বিবাহ বিচ্ছেদ যাই ঘটুক, তার জন্য নারীদের এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। আমরা সবাই জানি, জীবন কখনো সরল পথে চলে না। বরং জীবনের ধর্মই হলো প্রতি পদক্ষেপে বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়া। তবু এতটুকু সমস্যা পেরুতেই কেন আমাদের মানসিক শক্তি আসে না! কেনই বা নারীরা এত ভঙ্গুর মনের অধিকারী। যে নারী মানবসভ্যতার স্তম্ভ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্মদাত্রী তারা; এতটা ঠুনকো হৃদয়ের অধিকারী হলে সামনের দিকে এগুতে বেগ পেতে হবে। তবে, এসব নারীরা জীবন সম্পর্কে এতটা অসচেতন এবং উদাসীন কেন? তার জন্য আবারও পরিবারকেই দায়ী করতে হয়। কারণ পরিবারের শিক্ষা-দীক্ষা, জীবনবোধই মানুষকে পরবর্তী জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহায্য করে। সন্তানকে শিক্ষা দেওয়া উচিত জীবন সম্পর্কে। জীবন যে আসলেও রূপকথার কোনো গল্প নয় সে সম্পর্কে বুঝতে দিতে হবে। যেন স্রেফ বিচ্ছেদ, প্রেম, দাম্পত্য কলহকে জীবনের শেষ ভেবে নিজেই জীবনের ইতি টেনে না বসে।
হোঁচট খেলে বা পড়ে গেলেই জীবনের শেষ এই ভাবনা একেবারেই ভুল সে শিক্ষা প্রদান করা উচিত। নারীরা কেন এত ভঙ্গুর হবে? নারীদের মানসিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। জীবন কি সত্যিই এত ঠুনকো? বেঁচে থাকতে হলে জীবনের বাঁকাচোরা পথে হাঁটতে শিখতে হবে। নতুবা কোন সমস্যার সম্মুখীন হলেই মৃত্যুকেই সহজ মনে হবে। যা কখনোই কোন সমাধান নয়। যে বা যারা আত্মহত্যা প্রবণ মানসিকতা বহন করেন তাদের ভাবা উচিত জীবন একদিনের নয়। আলোর নিচে যেমন অন্ধকার ঠিক অন্ধকারের নিচেও আলোর সাক্ষাৎ মেলে। তাই কোনো হার-জিত বা কোনো রকম বিচ্ছেদ কখনোই চিরস্থায়ী নয়। যেখানে জীবনই চিরস্থায়ী নয় সেখানে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাকে চিরস্থায়ী করতে হবে। তার জন্য কর্ম করতে হবে।
সাধারণত বিচ্ছেদজনিত কারণে আত্মহত্যার প্রধান কারণ মানসিকভাবে ভেঙে পড়া, দুর্বল চিত্তের অধিকারী হওয়া। তাই এই সময় পরিবার- পরিজনদের সাহচার্য, সহোযোগিতা দরকার। মানসিক সাপোর্ট এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক ধারণা জন্মালে এসব ঠুনকো কারণে জীবনের মতো এত অমূল্য সম্পদ হেলায় হারাবে না। নারীদের মনে রাখতে হবে, জীবন একদিন বা এক ঘণ্টার নয়। যতদিন স্বাভাবিক মৃত্যু দুয়ারে এসে হানা না দিচ্ছে, ততদিন জীবন সংগ্রাম। এই সংগ্রামই জীবনের চরম সত্য। এর মধ্যে দিয়েই প্রতিনিয়ত বাঁচার স্বাদ গ্রহণ করা যায়। ফলে নারীদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মতো মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। পড়ে গেলো ধুলো ঝেড়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য কেঁদে ভাসিয়েও নয় এমনকি আত্মহত্যা করেও জীবনকে থামিয়ে দেওয়া যাবে না। তাই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে আজকের নারীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাক। আত্মহত্যা প্রবণ মানসিকতা বিলীন হোক।